রাণীনগরে স.প্রা. বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের গাইড ওয়াল ভেঙ্গে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে শিক্ষা কার্যক্রম
সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার শতবর্ষি রাণীনগর (২) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের গাইড ওয়াল ভেঙ্গে গেছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে যেকোন মূহুর্তে ভবনটি ভেঙ্গে পরার আশংকা রয়েছে। যার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।
অপরদিকে, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে বিদ্যালয়ের চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ না করায় শ্রেণি কক্ষ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। শ্রেণি সংকটের কারণে এক শিফটের পাঠদান চলছে দুই শিফটে। এতে করে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। কর্তৃপক্ষে অবহেলা ও উদাসিনতায় শ্রেণি কক্ষ সংকটের কারনে বিদ্যালয়ের মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ১৯১০ সালে রাণীনগর (২) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। উপজেলার খট্টেশ্বর রাণীনগর ইউনিয়নের খট্টেশ্বর গ্রামে সাড়ে ৭২ শতক জমির উপর বিদ্যালয়টি অবস্থিত। শতবর্ষের অধিক সময় ধরে বিদ্যালয়টি এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা অবহেলিত এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন। বিশেষ করে খট্টেশ্বর গ্রামের তৎকালিন সময়ে অনারিয়াম ম্যাজিস্ট্রেট খান সাহেব মোহাম্মদ আফজল ও ড. আনিসুজ্জামান খান বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন। বর্তমানে এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি বহুমুখি সমস্যায় জর্জড়িত। শ্রেণি কক্ষ সংকটের কারণে ১ম শ্রেণির ‘ক’ ও ‘খ’ শাখার ৮০ জনের পাঠদান একই কক্ষে, ২য় শ্রেণির ‘খ’ শাখা ও তয় শ্রেণির ‘খ’ শাখার পাঠদান একটি টিন সেডের পরিত্যাক্ত কক্ষে করাতে বাধ্য হচ্ছেন। শিশু শ্রেণি, ১ম শ্রেণি ও ২য় শ্রেণির ছুটির পর অন্যান্য শ্রেণির পাঠদান করানো হয়। শিশু শ্রেণির জন্য একটি নিদ্রিষ্ট শ্রেনি কক্ষ থাকা বাধ্যতামূলক। শ্রেণি কক্ষ সংকটের জন্য বিদ্যালয়ের মান সম্পন্ন শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে।
২০১৩ সালে থেকে পুরাতন জরাজীর্ণ ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করায় এই বিদ্যালয়ে শ্রেণি কক্ষ সংকট আরো প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ১টি টিনের কক্ষসহ মোট ৬টি কক্ষে চলে পাঠদান কার্যক্রম যা ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে নির্মাণ করা বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের পূর্বদিকের গাইড ওয়ালটি (সহায়ক দেওয়াল) পুকুরের মাঝে ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোন সময় ভবন এবং টয়লেটটি পুকুরের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা। এই বিদ্যালয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪ শত ৩১ জন শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করতে আসে। বহুবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়গুলো লিখিত ভাবে জানানোর ফলেও আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি বলে জানান বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ের কক্ষ সংকটের কারণে আমরা একই কক্ষে গাদাগাদী করে পাঠ গ্রহণ করতে হচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের পেছনের গাইড ওয়ালটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে সব সময় তাদেরকে ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। কখন যে ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে তা কারো জানা নেই। তারা এই সমস্যাগুলো থেকে অতিদ্রুত মুক্তি পেতে চায়। চায় একটি আধুনিক মান সম্মত বিদ্যালয় এটাই সরকারের কাছে তাদের দাবী।
প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র প্রামাণিক জানান, শতবর্ষী এই বিদ্যালয়টি খুবই অবহেলিত। বিদ্যালয়ের গাইড ওয়ালটি ভেঙ্গে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়তই শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শ্রেণি কক্ষ সংকট থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা আধুনিক মান সম্মত শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে, অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে শিক্ষকরাও হিমশিম খাচ্ছেন। তাই অতি দ্রুত বিদ্যালয়ের কক্ষ সংকটসহ যাবতীয় সমস্যা নিরসন করা অতিব প্রয়োজন।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এসএম রহীমূল বাসার বাবলু জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়ের গাইড ওয়ালটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, শ্রেণি কক্ষ সংকটতো আছেই। বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোন তহবিল না থাকার কারণে কোন কিছুই করতে পারছেননা। তাছাড়া ভবন ধ্বসে যেকোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসনসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার সমস্যাগুলো সম্পর্কে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। তারা আশ্বাস প্রদান করেছেন। বিদ্যালয়ের গাইড ওয়াল ও একটি নতুন ভবন নির্মাণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মজনুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ের গাইড ওয়াল ও শ্রেণি সংকটের বিষয়টি উপর মহলকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। তবে অতিদ্রুত এই সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য সরকার জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া বিনতে তাবিব জানান, বিদ্যালয়ের সমস্যার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম আল ফারুক জেমস বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় উপজেলার বরাদ্দ খুবই কম। যার কারণে অনেক কিছু করতে চাইলেও তা করতে পারেন না। নতুন ভবনতো নির্মাণ করার ক্ষমতা হাতে নেই। তবে তিনি সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করছেন। প্রয়োজনী সরকারি বরাদ্দ পেলেই বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ করবেন।