বরগুনার তাল তলীতে রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প হারিয়ে যাচ্ছে
জাহিদুল ইসলাম মেহেদী,বরগুনা: তালতলী উপজেলার রাখাইন পল্লীতে বিলুপ্তির পথে তাঁতশিল্প । মানবেতর জীবন পার করছে এখানকার তাঁতশিল্পীরা ।এসব রাখাইন পল্লীতে এক সময় যাওয়ার পথে অনেকটা দূর থেকেই তাঁতের ঠক ঠক আওয়াজ শুনতে পাওয়া যেত । দিন-রাত তাঁতীদের কর্মব্যস্ততায় গমগম করতে রাখাইন পাড়ায়। এখন আর নেই সেই কর্মচাঞ্চল্য,কমে এসেছে ঠক ঠক শব্দ । তবে তাঁতী বাড়ীতে গেলে দেখা যায়-রং বেরঙের সুতা, কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। তবে এখন আর এই রঙিন সুতা যেন আর রঙিন স্বপ্ন বোনে না তাঁতীর চোখে।
জানা যায়, অস্তিত্ব হারাতে বসছে বরগুনার তালতলীর ঐতিহ্যবাহী রাখাইন পল্লীর তাঁত শিল্প। একদিকে যেমন সুতার তীব্র সংকট, অন্যদিকে সুতার মাত্রাতিরিক্ত দাম, পাচ্ছে না সরকারি কোন সহায়তা, পণ্য বিক্রির পরিবেশ না থাকাসহ নানা সমস্যায় স্থবির হয়ে আছে তালতলীর তাঁত শিল্প। এসব সমস্যা সুষ্ঠু সমাধান না হলে রাখাইন তাঁতের অস্তিত্ব বিলীন হবে দাবি রাখাইনদের।
এদিকে পণ্য বিক্রির স্থান না থাকায় রাখাইন যারা তাঁতের কাপড় বুনছেন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। নামিশেপাড়া মিসসে মায়া রাখাইন বলেন, আমি “মহিলা উন্নয়ন কেন্দ্র” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলি। ২০০১ সালে বরগুনা মহিলা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন লাভ করি । উক্ত সংগঠনের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। নারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নারী নির্যাতন, নারী ও শিশু পাচার, যৌতুক প্রথা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাদক নির্মূল ও রাখাইন শিশুদের মাতৃভাষা শিক্ষা সহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রাখাইনদের বিলুপ্তির ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পকে পুর্নজীবিত করার জন্য সরকারি-বেসকারি সংস্থাদের সাথে যোগাযোগের অব্যাহত রয়েছে।আমি সংগঠনের পাশাপাশি তাঁতের কাজ করি ।
আমাদের বোনা কাপড়গুলোর মধ্যে শীতকালীন কাপড় বেশি। তাই এ কাপড়গুলো শীত প্রধান দেশে বিক্রির ব্যবস্থা করা গেলে আমরা সারা বছর কাপড় বুনতে পারতাম।
একই পাড়ায় রাখাইন তাঁতী মিসেস মাতংচিং বলেন, গত বছর যে কাপড় বুনেছি তা বিক্রি হয়নি এখনো। তাঁতের কাপড় বোনার প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকলেও কাপড় বুনছেন না অনেকেই। যে দুই একটি বাড়িতে কাপড় বুনছে তারা বলেছে, সুতার তীব্র সংকট এবং সুতার দাম বাড়ায় তারাও পড়েছেন সমস্যায়। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অন্যদের মতো তাদেরও বন্ধ করে দিতে হবে তাঁতের কাপড় বোনা।
রাখাইন তাঁতী মিস চোনে রাখাইন, মিসেস মাহানচিং, মিসেস মাচান আরো অনেকে বলেন, মুনাফা কমে যাওয়ায় তরুণ প্রজন্মের কেউ তাঁতের পেশায় আসতে চায় না, অভিভাবকরাও চান না অনিশ্চিত ভবিষ্যতের এই কাজে জড়িয়ে পড়ুক ছেলে-মেয়েরা।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের পটুয়াখালী জেলার লিয়াজোঁ অফিসার মোঃ রাজিবুল ইসলাম বলেন, রাখাইন তাঁতীদের জন্য ঋণ সুবিধা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা উধর্তন কর্মকর্তার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়ছে। অতিশীঘ্রই অনুমোদন হয়ে আসবে।
তালতলী উপজেলা তাঁতী লীগের আহবায়ক মি: মংচিন থান বলেন, এ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে কাপড় বিক্রির আলাদা মাকের্ট, দাতা সংস্থার সহায়তা, সুতার সহজ প্রাপ্তি, সুতার দাম কমানো, আধুনিক প্রশিক্ষণ, কাপড়ের ভিন্ন ব্যবহার কৌশল প্রশিক্ষণ, সরকারি বিনিয়োগ দরকার।