লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার! কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পঞ্চনান বালা
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার! কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পঞ্চনান বালা। হায়রে কপাল, কপালের নাম গোপাল। ছোট বড় মিলে ১৪টি বিদায়ী সংবর্ধণা ও উপঢৌকন দিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের শিক্ষকগণ। বদলী হলেও উপহার আর সংবর্ধণা দেয় এটা মুন্সীগঞ্জেই দেখা যায়। সরকারি কর্মকর্তার হাজার রকমের অপরাধ কর্ম করেও অপরাধী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পঞ্চানন বালা পেলেন শতশত সুবিধাভোগী শিক্ষকের হাতে নানা রকমের উপঢৌকন। উপঢৌকনের মধ্যে রয়েছে ফুলের তোড়া, স্যুটকোর্ট, দামি শাড়ি, স্মার্ট মোবাইল ফোন, ডিনার সেট, সোনার গহনাসহ আরো কতকিছুই লুকায়িত পসরা। এ যেনো হরিলুটের দেশ, মুন্সীগঞ্জ জেলার শিক্ষক সমাজ। যে যতো বেশী ভালোবাসা আর বড় উপঢৌকন দিয়েছেন সেই হবেন নতুন শিক্ষা অফিসারের খুব কাছের ¯েœহধন্য শিক্ষক। সরকার তাকে বাড়ি ভাড়া বাবদ যে টাকা দিয়েছে সে টাকা বেতনের সাথে তুলে নিয়েছেন কিন্তু সে ২বছর এক মাস বসবাস করেছে জেলা শিক্ষা অফিসের দোতালায়।
সাবেক এই প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অবহেলায় মুন্সীগঞ্জ জেলাবাসী যেনো অন্ধ হয়ে গোলামীর মতো কাজ করে গেলেন, যেন কেউ তার কোন কাজের ভুলই পায়নি বা পঞ্চনান বালা খুবই পবিত্র অফিসার হিসাবে এই জেলা বাসীর কোমল মতি শিশুদের বিরাট কিছু দিয়ে গেলেন। কেউ বলার সাহসও করলেন না কি কি অপরাধ বা দেশ বিরোধী কাজে করেছেন অফিসার।
পঞ্চসান বালার জেলা শিক্ষা অফিসে লোকবল কম, তিনি খবরও রাখেন না যে অফিসে জাতীয় পতাকা উঠানামা হয় কি না, গতো কয়েক বছরই হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিক্ষা প্রশ্ন পত্র ফাঁস, শিক্ষদের বদলি বাণিজ্য, সর্বশেষ প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত শিক্ষকদের বাঁচানোর পরিকল্পনা। আর এই বাঁচানোর কারণেই কি এতো ভালোবাসা পেলেন পঞ্চানন বালা? সরকারের কোষাগারের বাড়ীভাড়া নিয়ম মাফিক নিলেও পঞ্চানন বালা থাকতেন জেলা শিক্ষা অফিসের দ্বিতীয় তলার সিড়িঁ কোটায়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় (হাজী সুবেদ আলী সরকারি প্রাঃ বিদ্যাঃ) থাকার পরও ওয়াল লাগোয়া ব্রিলিয়ান্ট কিন্ডার গার্ডেন বিদ্যালয় চলে কিভাবে? এটা কোন নিয়মের মাধ্যমে কিন্ডারগার্টেনটি চলছে শিক্ষা অফিসের সামনে? কিভাবে চলছে প্রশাসন নিরব কেন? কিন্ডারগার্টেন স্কুল দিয়ে যদি চলে কেন সরকার এই প্রাথমিক বিদ্যালয় করেছেন? সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও কিন্ডারগার্টেন করা হউক? অন্তত সরকারের কয়েক লক্ষ টাকা বেঁচে যাবে এমন মন্তব্য করছেন কাটাখালি ও ঐ রোডে চলাচলকারী সচেতন মহল।
জি হ্যা এটাই সত্য যে গত ১৪ই জানুয়ারী হতে ১৭ই জানুয়ারী পর্যন্ত চলে পঞ্চানন বালার ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপঢৌকন নেয়ার সভা-সমাবেশ। কোথাও সাংবাদিকদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ান, সংবাদ প্রকাশের আতংকে। মুন্সীগঞ্জক্রাইমটিভি’র একটি টিম সারাদিন অনুসন্ধান নামলে তারা অনুসন্ধানে পাওয়া যায় রাত ৯টা পর্যন্ত চলে পঞ্চানন বালার পঞ্চ রকমের কর্মের ফলা ফল। এই শীতেও খুব কাছের ও সুবিধাভোগী শিক্ষকরা একান্ত সময় নিয়ে আলাদা নমুনায় বিদায় জানাতে ভুল করেনি।
অনেক কাজের কাজী আমাদের সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার পঞ্চানান বালা। দলবেঁধে সব থানা ও বিভিন্ন বিদ্যালয় শিক্ষকরা আলাদা ভাবেও একান্ত সময় নিয়ে বিদায় সংবর্ধণা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান যে, মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রতিটি বিদ্যালয় হতে ২০০ শত টাকা করে চাঁদা উঠিয়ে নিয়েছেন তিনি। মুন্সীগঞ্জ জেলাতে মোট ৬৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। উপঢৌকন ছাড়াই এই টাকার হিসাব জানা যায়। এই টাকার মাঝে আরো রয়েছে সরকারের প্রাপ্ত প্রায় তিন লক্ষ টাকার বাড়ী ভাড়া। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসাবে এখানেই তাহার একটা বড় ধরনের লুটপাটের অংশ বলেও জানান তিনি।
১৪ জানুয়ারী মুন্সীগঞ্জ সদর থানার নয়াগাঁ, ১৫ই জানুয়ারী গজারিয়া, ১৬ই জানয়ারী সিরাজদিখাঁন এবং ১৭ই জানুয়ারী টঙ্গীবাড়ী ও লৌহজং সংবর্ধনায় সিক্ত হন পঞ্চানন বালা। অভিযোগ আসে স্কাউটিং প্রোগ্রাম ছিলো ১৭ জানুয়ারী, অনুষ্ঠান সমাপ্ত না করেই উপঢৌক নেয়ার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।
এতোসব অবহেলিত কাজের পরও সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাসলিমা বেগম বিদায়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কে নামী দামী কোম্পানির স্মার্ট ফোন উপঢৌকন হিসেবে উপহার দেন। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
এই বিষয়ে সদর শিক্ষা অফিসার তাছলিমা বেগম জানান, মিটিং এ ছিলাম তবে কোন মোবাইল উপহার দেই নাই, সবাই বিদায় অনুষ্ঠানে ছিলো সত্য, ওখানে আমিও ছিলাম।
মুন্সীগঞ্জ সদর সহ-শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, বিদায়ী শিক্ষা অফিসার পঞ্চানান বালা স্যারকে অফিস নিয়মে বিদায় জানাই, সদর অফিসার তাসলিমা বেগম একটি দামী মোবাইল উপহার দিয়েছেন সত্য। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান জেলার এই অফিসার ২বছর ১ মাস অফিস গেস্ট রুমে থাকাটা বে-আইনী। তিনি আরো জানান, বে-আইনী ভাবেই তিনি অফিস গেস্ট রুম ব্যবহার করেছেন আর সরকারী খাত থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ অর্থ নিয়েছেন।
কোন শিক্ষকই তার আচরণে সন্তোষ্ট ছিলো না বলে এক শিক্ষক জানান, পঞ্চানন বালা একজন জেলার অফিসার সেই মোতাবেক কোন কিছুই সাধারণ শিক্ষকরা পায় নাই। তবে কিছু চাটুকার শিক্ষরগণ তাকে কদর করে ফয়দা লুটেছেন বলে নাম না বলার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শিক্ষাকে তিনি কোন দিনই মূলায়ন করে অফিস করেনি। অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে অফিস ফাইল নিয়ে গবেষনায় মগ্ন থাকতেন এই অফিসার।
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রাঃ বিদ্যাঃ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন জানান, অন্য উপজেলায় কি দিয়েছেন আমার জানা নাই তবে আমাদের যে ফান্ড আছে সেই ফান্ড থেকে আমরা কিছু দিয়ে বড় স্যারকে বিদায় জানাই। তিনি আরো জানান, (সেল ফোন আলাপে) জেলার প্রাথমিক শিক্ষার সর্ব উচ্চ পদে থেকে কোন সফলতা দেখাতে পারেনি। শিক্ষকদের উপর বিদায়ী অফিসার জুলুম করেছেন সত্য। প্রতিবাদ করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন করেছি, জেলা প্রাথমিক সহ শিক্ষা অফিসার সব জানেন বলে জানান আমজাদ হোসেন। তিনি আরো জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ২০০ বছরের পেছনে ফেলেছেন বিদায়ী শিক্ষা অফিসার পঞ্চানন বালা।
লৗহজং থানা শিক্ষা অফিসার আব্দুল কাদের জানান, নিয়ম অনুযায়ী আমাদের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে বিদায় জানাই।
শ্রীনগর থানা শিক্ষা অফিসার মোঃ কামাল হোসেন সেল ফোনে জানান, টাকা পয়সা উঠানোর বিষয় জেলা শিক্ষক নেতা করেছেন। তিনি আরো জানান ভালো কাজ কি আর মন্দ কাজ কি সেই দিক না গিয়ে মাসিক মিটিং এ বিদায় জানিয়েছি।
এমন বিষয় সিরাজদিখান থানা শিক্ষা অফিসার মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, মাসিক মিটিংএ ছোট পরিসরে বিদায় জানাই। ব্যক্তিগত কোন বিদায় তাকে জানাইনী। আলাদা বিদায় অনেকেই দিয়েছেন যারা পঞ্চানন বালা স্যার কে বেশী ভালো বাসছেন তারাই একক ভাবে উপঢৌকন দিয়ে বিদায় জানিয়েছেন।
গজারিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মমতাজ বেগম জানান, ১৫ইজানুয়ারী আমাদের মাসিক মিটিং ছিলো সেই মিটিং এ সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার পঞ্চানন বালা স্যার কে বিদায় জানাই। বিদায় অনুষ্ঠানের ব্যয় কতো আমি জানি না তবে গজারিয় শিক্ষক নেতা এনায়েত উল্লাহ বিষয়টি দেখবাল করেছেন।
এমন বিষয় শিক্ষক নেতা ৩৪নং হোগলা কান্দি সঃ প্রাঃ বিদ্যাঃ প্রধান শিক্ষক এনায়েত উল্লাহকে সেল ফোনে বিদায় অনুষ্ঠানের ব্যয় কতো হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি জানান, পাচঁ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। খরচের টাকা আমরা শিক্ষকগণ মিলে বহন করেছি।