মরদেহ পুতে রাখতে গর্ত খুঁড়ে খুনিরা! “ব্যবসায়ী গোলাম হোসেন হত্যাকান্ড”
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
বিমান বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেওয়া আট লাখ টাকা উদ্ধার করতে হত্যার শিকার হন লালমনিরহাটের সার ব্যবসায়ী গোলাম হোসেন। মরদেহ পুতে রাখতে সদ্য রোপণ করা আমান ধান ক্ষেতে গর্ত খুঁড়ে রাখে খুনিরা।
ঘটনার তদন্ত করে গিয়ে বের হয়ে আসছে এমন তথ্য বলে জানান পুলিশ। মঙ্গলবার ভোর রাতে নিজ বাড়িতে সার ব্যবসায়ী গোলাম হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করেন দূর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার বিকালে নিহতের ছেলে জাহেদুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই চক্রের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত গোলাম হোসেন উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের নিথক অচিনতলা গ্রামের মৃত দবির উদ্দিন মুন্সির ছেলে। তিনি স্থানীয় সীমান্ত সিনেমা হল মার্কেটের সার ব্যবসায়ী ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোলাম হোসেনের বড় ছেলে কৃষি ডিপ্লোমাধারী জাহেদুল ইসলামকে বিমান বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে ৩ বছর আগে ৩ লাখ টাকা নেন পার্শ্ববর্তী গোড়ল ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল আলম। এরই মাঝে চাকরিতে যোগানের কথা বলে জাহেদুলকে কয়েক বার ঢাকায় নিয়ে যান কিন্তু চাকরি দিতে ব্যর্থ হন আশরাফুল। চাকরির আট লাখ টাকা ফেরত দাবি করলে উভয়ের মাঝে দ্ব›দ্ব সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়ভাবে সালিশ-বৈঠকে ৪ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য একটি চেক দেন আশরাফুল। কিন্তু সেই চেকের বিপরীতে হিসাব নম্বরে কোনো টাকা ছিল না। এ টাকা উদ্ধার করতে চেক দাতা আশরাফুলের বিরুদ্ধে আদালতে একটি চেক জালিয়াতির মামলা করেন গোলাম হোসেন।
সেই মামলায় গত সোমবার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতে সময় চেয়ে আবেদন করেন। ফলে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ আগষ্ট দিন ধার্য করেন আদালত। আদালত থেকে বাড়ি ফিরে দিনগত মধ্য রাতে নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হন মামলার বাদী গোলাম হোসেন। মঙ্গলবার ভোরে স্থানীয়দের খবরে মরদেহ উদ্ধার করে এবং সন্দেহজনক জিজ্ঞসাবাদের জন্য আশরাফুলকে আটক করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ।
গোলাম হোসেনের বাড়ির সামনে সদ্য রোপন করা তারই ধান ক্ষেতে প্রায় ৪ ফুট দৈঘ্যের একটি গর্ত খুঁড়ে রাখে ঘাতকরা। স্থানীয়দের ধারণা ঘাতকরা গোলাম হেসেনের মরদেহটি ওই গর্তে পুতে রাখার পরিকল্পনা করেছিল।
নিহতের ভাতিজা ফজলুল করিম জানান, গোলাম হোসেনের ৩ ছেলের দুই ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। বড় ছেলে জাহেদুলের চাকরির জন্য জমি বিক্রি করে দেওয়া আট লাখ টাকার জন্য আশরাফুলের সাঙ্গে বিবাদ বাদে। যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এছাড়া পুরো এলাকায় কারও সঙ্গে বিবাদ নেই গোলাম হোসেনের।
এ ঘটনায় নিহত গোলাম হোসেনের বড় ছেলে জাহেদুল ইসলাম বাদী হয়ে তিন জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনাস্থলে তদন্তে আসা লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এনএম নাসিরুদ্দিন বলেন, পাওনা আদায়কে গুরুত্ব দিয়ে অন্যসব দিক বিবেচনা নিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এ মামলায় আটক আশরাফুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।