সীতার কোট বৌদ্ধ বিহার প্রহরী না থাকায় অবাধে গরু ছাগল বিচরণসহ কুঠুরির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে
এ সাজেদুল ইসলাম নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর)
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক নিদর্শন সীতার কুঠুরি বৌদ্ধ বিহার অবহেলায় আর অযতেœ সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে । পর্যটন কেন্দ্রের অপার সম্ভাবনাময় এই স্থানটি সীমানা বেষ্টুনী না থাকায় গোচারণ ভ‚মিতে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ঐতিহাসিক এই নিদর্শনের কক্ষগুলির বেশ কিছু স্থান ভেঙ্গে গেছে। বিহারের ম‚ল ফটকটিতে গরু ছাগলের ছড়াছড়ি। দেখার কেউ নেই।
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের শালবনের সংলগ্ন এই নিদর্শনকে ঘিরে রামের পতœী সীতাকে নিয়ে যুগ যুগ ধরে এলাকায় চলে আসছিল কল্পকাহিনী। সীতাকে পঞ্চবটীর বনের গভীরে বনবাস দিয়ে তার থাকার জন্যে তৈরী করে দেয়া হয়েছিল একটি কুঠুরি। যা কিনা সীতার কুঠুরি নামে খ্যাত। কিন্তু ১৯৬৮ সালে প্রত্মতত্ত¡ বিভাগের অনুসন্ধানকারী নিদর্শনের আংশিক অংশ খননের পর নিশ্চিত হয় এটা একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার।
নবাবগঞ্জ উপজেলার সদর থেকে পশ্চিম দিকে বিরামপুর-নবাবগঞ্জ রাস্তার উত্তর পার্শ্বে গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেপুর মাড়াষ মৌজার প্রায় ২ একর ভুমির উপর অবস্থিত এ বিহারটি। এই বিহার প‚র্ব পশ্চিমে লম্বা ২২৪ ফুট, উত্তর দক্ষিণ প্রস্ত ২১২ ফুট। বিহারটিতে ছোট বড় কক্ষের সংখ্যা ৪১টি। বিহারের ভিতরে দক্ষিণ-প‚র্ব দিকে একটি কুপ ছিল। বর্তমানে কুপটি ভরাট হয়ে গেছে। বিহারের বাইরে পুর্ব-দক্ষিণ দিকে পাশাপাশি অবস্থিত ৫টি কুটির দেখা যায়। সম্ভাবত এগুলো শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার হত।
ম‚ল মন্দির ছিল দক্ষিণ দিকের মাঝখানে। নিপুন হাতের গাঁথুনী ইমারতের লম্বা, মধ্যম ও ছোট ইট এবং চুন স‚রকী দ্বারা বিহারটি নির্মিত।
এলাকাবাসী স‚ত্রে জানা যায় বিহারের উত্তর দিকে মাড়াষ গ্রামের মহিরউদ্দিনের পুত্র মোঃ তালেব আলী বিহারের পার্শ্বে জমি চাষ করতে গিয়ে জরাজীর্ণ একটি ধারালো অস্ত্র (বাইশ) কুড়িয়ে পান। এ অস্ত্র দিয়ে ১/২ কোপে বনের বড় বড় শাল গাছ কাটা যেত। বিষয়টি বন বিভাগের লোকজন টের পেয়ে তালেব আলীকে জিজ্ঞাবাদ করলে তালেব আলী বন বিভাগের লোককে ওই অস্ত্রটি প্রদান করে। বন বিভাগের কর্মকর্তা অস্ত্রটি পরীক্ষার জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান। পরে জানা যায় অস্ত্রটি ছিল হীরার তৈরী।
বিষয়টি জানাজানি হলে আরও মুল্যবান প্রতœতত্ত¡ মিলতে পারে বলে তৎকালীন দিনাজপুর জেলা পরিষদ নিজস্ব অর্থে বিহারটি খননের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পরে চাকরি দেয়া হয় তালেব আলীকে ওই বিহার পাহারা দেয়ার জন্য। কয়েক বছর পুর্বে তালেব আলী মারা যায়। বর্তমানে তালেব আলীর পুত্র তার পিতার দায়িত্ব পালন করছে। খননের পর সে সময় বিহারের কিছু অংশ সংস্কার করা হয়। এর পরে আর কোন সংস্কার না হওয়ায় অযতেœ ও অবহেলায় বিহারটি বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে।
বিহারের জায়গা অনেকে জবর দখল করে বাড়ী ঘর নির্মাণ করেছে বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। তবে যারা বাড়ী ঘর করে আছে তারা নিজেদের জমি বলে দাবি করছে।
নয়নাভিরাম বৌদ্ধ বিহারটি সংস্কার করে দর্শনীয় স্থান হিসাবে গড়ে তোলা হলে সেখানে হতে পারে জনপ্রিয় পিকনিক কর্ণার এবং পর্যটন কেন্দ্র । যা থেকে আসতে পারে সরকারের ব্যাপক রাজস্ব আয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতা মো. মাহাবুবুর আলম জানান, বিহারটি সংস্কারসহ আধুনিকায়ন করা হলে বিহারের ঐতিহ্য ফিরে আসবে এবং দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমন ঘটবে।
উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছা. পারুল বেগম জানান, ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বিহার। তিনিও সংস্কারসহ মেরামতের দাবি জানান।
এ বিষয়ে বগুড়া অঞ্চলের প্রতœতত্ব বিভাগের ফিল্ড অফিসার (কল্যান কর্মকর্তা) হাসিবুল হাসান সুমির মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জনবল সংকট রয়েছে। জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।