বেনাপোলে পাসপোর্ট দালালদের কাস্টমস ও পুলিশ ইমিগ্রেশনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
শহিদুল ইসলাম, বেনাপোল প্রতিনিধি
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট, কাস্টমস ও পুলিশ ইমিগ্রেশনকে দালাল মুক্ত করার প্রতিবাদে কাস্টমস এর বিরুদ্ধে এবার একাট্টা হয়েছে পাসপোর্ট দালালরা। সাংবাদিক পরিচয় দেয়া একশ্রেণীর পাসপোর্ট দালালদের কাস্টমস ও পুলিশ ইমিগ্রেশনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার জাকির হোসেন। ইতিমধ্যে কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার জাকির হোসেনকে হত্যার হুমকি দিয়েছে ঐ সব দালালরা।
বেনাপোল কাস্টমসের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে। সাংবাদিক পরিচয়দানকারী পাসপোর্ট দালালদের নামের তালিকাও করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমস ও পুলিশের নাম করে এক শ্রেণীর পাসপোর্ট দালালরা মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল ভারত গমনাগমনকারী নিরীহ পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে।
প্রতিদিন সকালে এসব চিহ্নিত পাসপোর্ট দালালরা প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে পাসপোর্ট নিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে জোর করে কাস্টমস এর অভ্যন্তরে ঢোকার চেষ্টা করলে বাধা দেয় কাস্টমস এর ডেপুটি কমিশনার জাকির হোসেন। ফলে ঐ চক্রটি ডেপুটি কমিশনারকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় প্রকাশ্যে।
বর্তমানে ভারত গমনাগমনকারী পাসপোর্ট যাত্রী হয়রানি বন্ধে নিরাপওা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন অফিসে। ফলে পাসপোর্ট ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন প্যাসেঞ্জার টার্মিনানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীর সাহসী পদক্ষেপের কারণে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করতে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক স্ক্যানিং মেশিন এবং জোরদার করা হয়েছে যাত্রীদের নিরাপওা ব্যবস্থা। বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৫০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করেছে। এসব যাত্রীদের কাছ থেকে বেনাপোল সোনালী ব্যাংক বিদেশে ভ্রমণকর বাবদ রাজস্ব আদায় করেছে ৫৬ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। গোটা কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন এলাকায় বসানো হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা, যাত্রীদের বিশ্রামাগার ,শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
এরই পাশাপাশি মাইকে দালালদের কাছে পাসপোর্ট না দেয়ার জন্য ঘোষণা দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
টার্মিনালের প্রধান ফটকে বন্দরের নিরাপওা কর্মী,আনসার সদস্য ও কাস্টমস অফিসারদের সার্বক্ষণিক নজরদারি বৃদ্ধি করায় প্রবেশ করতে পারছে না পাসপোর্ট দালালরা।
চেকপোস্ট দিয়ে ভারত গমনাগমনকারী পাসপোর্ট যাত্রী সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন বেনাপোল দিয়ে ৪/৫ হাজার বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে যাতায়াত করছে। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের সেবার মান বৃদ্ধি করায় যাত্রীরা দ্রুত ও সুশৃংখলভাবে দালালমুক্ত পরিবেশে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, পাসপোর্ট দালালদের উৎপাত এখনও বন্ধ হয়নি। পূর্বের তুলনায় এ পথে দ্বিগুন যাত্রী যাতায়াত করায় সরকারের রাজস্ব ও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রায় ৩/৪ হাজার লোক যাতায়াত করে ভারতে।
আগের তুলনায় প্রায় ২ থেকে তিন হাজার যাত্রী বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিমাসে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হচ্ছে বিদেশ ভ্রমণ কর থেকে। বর্তমানে প্রত্যেক যাত্রীকে সিরিয়ালে দাঁড় করিয়ে তাদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হচ্ছে। দালাল ও বহিরাগতরা যাতে ইমিগ্রেশনে ঢুকতে না পরে সেজন্য প্রবেশ মুখেই কঠোরভাবে নিরাপওা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী জানান, বর্তমানে চেকপোস্ট, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালাল মুক্ত করা হয়েছে। তারপরও সাংবাদিক পরিচয়ে কিছু দালাল জোর করে কাস্টমস কম্পাউন্ডে প্রবেশের চেষ্টা করছে। আমরা ঐসব সাংবাদিক পরিচয়দানকারী বেশ কিছু দালালদের সনাক্ত করেছি, তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই মামলা করা হবে।