পর্যটকদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পার্ক ও পিকনিক স্পট, খুলছে সম্ভবনার দ্বার
নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ :
পদ্ম ফুলকে কেন্দ্র করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ণ ভূমি গোপালগঞ্জ জেলা এখন পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর। জলজ ফুলের রানী বলা হয় পদ্মকে। প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া পদ্মফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে গোপালগঞ্জের বিলের চিত্র। দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে কেউ।
প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা। বিস্তৃর্ণ জলাভূমি। চারদিকে লতা-গুল্ম কোথাও কচুরিপানা। এরই মাঝে ভেসে রয়েছে অগণিত পদ্ম। ¯িœগ্ধতার রং আর আকাশে মেঘের ভেলা এই দুইয়ে মিলে যেন একাকার প্রকৃতি। গ্রাম-বাংলার যেখানেই পুকুর, খাল-বিল রয়েছে সেখানেই দেখা মিলবে অপরূপ এই ফুলটির। তেমনি গোপালগঞ্জের বিভিন্ন বিলে ফুটে থাকা এই পদ্ম তৃষ্ণা মেটাচ্ছে প্রকৃতি প্রেমীদের।
প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া লাল-গোলাপি ও সাদা পদ্মফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে গোপালগঞ্জের পদ্মবিলের। দূর থেকে তাকালে মনে হবে বিলে কেউ যেন ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে। এ যেন পদ্মমেলা। গোপালগঞ্জ জেলার চার পাশে রয়েছে অসংখ্য বিল। তার মধ্যে অন্যতম সদর উপজেলার খেলনা ও বলাকইড় বিল। গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে।
অবস্থিত খেলনা গ্রাম। খেলনার বুক চিড়ে বিশাল বিলের মাঝ দিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা আঁকা-বাঁকা ডানা মেলে চলে গিয়েছে বলাকইড় গ্রামে। খেলনা গ্রামের এ রাস্তা দিয়ে যেতেই চোখে পড়বে পদ্ম ফুলের মেলা। ১৯৮৮ সালের পর থেকে বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিক ভাবে পদ্মফুল জন্মে। আর এ কারণে এখন এ বিলটি পদ্মবিল নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে।
বর্ষা মৌসুমে চারিদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে গোলাপি রং এর পদ্ম দেখলে মন ও জুড়িয়ে যায়। চোখ যত দূর যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম। এমন অপরূপ দৃশ্য যেন ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে। এ বিলের সৌন্দর্য ও পদ্ম দেখার জন্য প্রতিদিনই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। তারা নৌকায় ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। আর একে কেন্দ্র করে স্থানীয়রাও ভ্রমণ পিপাসুদের সার্বিক সহযোগিতা করতে নানা রকম পসরা মিলিয়ে বসছেন।
বলাকইড় গ্রামের কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার (৬০) বলেন, হিন্দু ধর্মালম্বীরা বিভিন্ন পূজা পার্বণে পদ্ম ফুলের ব্যবহার করে থাকে। তাই এলাকার শ্রমজীবী মানুষ ফুল ও ফল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
খেলনা গ্রামের স্বপপুরি পদ্ম মেলার আয়োজক আহসান হাবিব শেখ তুহিন বলেন, পর্যটকদের জন্য ইতি মধ্যে রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দোকান। এখানে আছে ছোট বড় প্রায় ২০-২৫ টা নৌকা। নৌকা ভ্রমনের জন্য নির্দিষ্ট কোন ভাড়া না থাকলে ও পর্যটকরা ভ্রমন শেষে আমাদের খুশি হয়ে যা দেন তাতেই আমরা মহা খুশি। এছাড়া পদ্ম ফুলের এ মেলার জন্য আমাদের গ্রামের কালাম ও মান্নু শেখের রয়েছে একটি পার্ক, বালুর মাঠ।
রয়েছে একাধিক বড় ঘের যেখানে রয়েছে মনোরম দৃশ্য পিকনিক কর্ণার। বিলের মাঝে দেখা মেলবে মাছুদ, সোহাগসহ এক ঝাঁক যুবকের নানা রঙ্গের ব্যানার ফেস্টুন। যেখানে রয়েছে নানা উপদেশ ও সতর্কবাণী।
গোপালগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোছা: শাম্মি আক্তার বলেন, গোপালগঞ্জ জেলা বঙ্গবন্ধুর পূর্ণভূমি। সে হিসেবে এ জেলাটাই পর্যটক কেন্দ্রে পরিনত হবে। তবে পদ্মফুল একটা গ্রামীণ ঐতিহ্য একে কি ভাবে রক্ষা ও সংরক্ষণ করা যায় সে জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো: মোকলেসুর রহমান সরকার বলেন, খেলনা এবং বলাকইড় গ্রামের পদ্মবিলের পদ্মফুল কে কেন্দ্র করে পর্যটকদের জন্য ইতিমধ্যে আমরা পাকা রাস্তা করে দিয়েছি এবং পর্যটকদের জন্য পাবলিক টয়েলেটের ব্যাবস্থাসহ নানা প্রকল্প রয়েছে বলে তিনি জানান।