গোপালগঞ্জ যার আলোয় উদ্ভাসিত : সেইন্ট মথুরানাথ
নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ
সেইন্ট মথুরানাথ বোস। অশিক্ষা আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যে মানুষটির ছিল আজীবন লড়াই। আলোর দূত হয়ে তিনি ১৮৭৪ সালে গোপালগঞ্জে এসেছিলেন। সেইন্ট মথুরানাথ ছিলেন এ অঞ্চলের শিক্ষার অগ্রদূত, সমাজ সংস্কারক ও ভাটির মানুষের আশার আলো। ২ সেপ্টেম্বর পার হয়ে গেল সেই মহান মানুষটির ১১৭তম মৃত্যু বাষির্কী।
প্রায় দেড়’শ বছর আগে গোপালগঞ্জে অঞ্চল ছিল জলাভূমি ও পশ্চাৎপদএলাকা। এখানকার আদিবাসীদের প্রায় সবাই ছিল নিম্নবর্নের হিন্দু স¤প্রদায়ের লোক। এরা ছিল অতিশয় গরীব ও অশিক্ষিত। আঁধারে ঢাকা এ অঞ্চলে মুক্তির বার্তা পৌঁছে দিতে কলকাতার ভবানীপুরের লন্ডন মিশনারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে ১৮৭৪ সালের ফেব্রæয়ারিতে নৌকা যোগে গোপালগঞ্জ পৌঁছান সেইন্ট মথুরানাথ বোস।
তিনি শুরু করেন নিরক্ষর মানুষকে জাগিয়ে তোলার কাজ। গড়ে তোলেন শিক্ষাঙ্গণ, ভজনালয়, কোর্ট, পোষ্ট অফিস, হাইস্কুল, ব্যাংক, হাসপাতাল ও কৃষি খামার। গোপালগঞ্জের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসতে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে থেকে হয়ে ওঠেন তাদের বন্ধু। গোপালগঞ্জবাসীর জন্য তিনি আশির্বাদ হয়ে এসেছিলেন।
সেইন্ট মথুরানাথ বোস স্থাপিত এ অঞ্চলের প্রথম পাঠশালাটিই মিশন হাইস্কুল নামে পরিচিত। পরে তার নামানুসারে এম এন ইনস্টিটিউট রাখা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ মিশন হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৪২ সালে বঙ্গবন্ধু এই মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। স্কুলটি ১৯৫০ সালে কায়েদে আযম কলেজ ও পরে বঙ্গবন্ধু কলেজ (বর্তমানে সরকারী বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) নামকরন করা হয়।
এই মহান পুরুষ ১৯০১ সালের ২ সেপ্টেম্বর ৫৮ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। যে মানুষটির আপ্রাণ চেষ্টায় গোপালগঞ্জে সভ্যতার বিকাশ, সেই মহাপ্রাণ সেইন্ট মথুরানাথের নাম আজও গোপালগঞ্জবাসীর কাছে বিস্মৃত প্রায়। সেইন্ট মথুরানাথ বোসের ১১৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে খ্রীষ্টিয়ান ফেলোশিপের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছিল নানা কর্মসূচী। এর মধ্যে ছিল শোক র্যালি, সমাধিতে মাল্য দান, আলোচনা ও প্রার্থনা সভা এবং দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ।