খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় ফের মেডিকেল বোর্ড গঠন হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ফের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তিনি বলেছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুপারিশ অনুযায়ী আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব, যদি প্রয়োজন হয়।
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাত সদস্য রোববার সচিবালয়ে এসে দেখা করার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিকাল ৩টা থেকে মন্ত্রীর কক্ষে পৌনে এক ঘণ্টার এই বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে দ্রুত ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন তারা।
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার শুনানি শেষ করতে কারাগারের ভেতরেই আদালত বসিয়ে তার বিচারের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
গত সপ্তাহে ওই আদালতে শুনানির প্রথম দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিচারককে বলেন, তিনি অসুস্থ। এই অবস্থায় তার পক্ষে বার বার আদালতে আসা সম্ভব নয়। বিচারক যতদিন খুশি সাজা দিতে পারেন।
এরপর গত শুক্রবার কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসে তার আইনজীবীরাও সাংবাদিকদের একই কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে রোববার হাই কোর্টে একটি রিট আবেদনও করা হয়।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসা বিএনপি নেতারা আগেই জানিয়েছিলেন, তারা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। সে অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল বিকালে সচিবালয়ে যায়।
বিকাল ৩টা থেকে ৩টা ৫০ পর্যন্ত সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ তলায় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কক্ষে এই বৈঠক চলে। বৈঠকের এক পর্যায়ে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীনও মন্ত্রীর কক্ষে প্রবেশ করেন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তাকে (মন্ত্রী) অনুরোধ করেছি যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দ্রুত যেন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। ইউনাইটেড হাসপাতাল- যেটা তিনি পছন্দ করেন, সেই হাসপাতালে নেওয়ার জন্য আমরা তাকে অনুরোধ করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জানিয়ে ফখরুল বলেন, তিনি বলেছেন, যারা দায়িত্বে আছেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আইজি প্রিজনসসহ অন্যদের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি এও বলেছেন যে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যারা আছেন, তাদের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
সেক্ষেত্রে কবে নাগাদ ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে, সেই প্রতিশ্রুতি মিলেছে কি না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেটা সুনির্দিষ্টভাবে উনি কিছু বলেননি। বলেছেন যে, আজকেই ওই সভাটা করবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান এই সাক্ষাতে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন।
বিএনপি নেতারা চলে যাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, কারাগারে অন্তরীণ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু রিকোয়েস্ট তারা করে গেছেন লিখিত আকারে। তারা জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং তার অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর আগে যে রকম রিকোয়েস্ট করেছিলেন অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য, এবার লিখিত দিয়েছেন। আমরা লিখিত আবেদনটির প্রেক্ষিতে সচিব মহোদয় এবং আইজি প্রিজনসকে এখনই দায়িত্ব দিয়েছি।
তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়ে গতবারও সবাই মিলে যে একটি বোর্ডে তৈরি করেছিলেন তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য, তদ্রুপ বোর্ড গঠন করে আবারও পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন আমাদের সরকারি ডাক্তার এবং তাকে যারা চিকিৎসা দিতেন।
খালেদার অসুস্থতার কারণে এর আগেও একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছিল সরকার। কিন্তু পরীক্ষা করে সেই মেডিকেল বোর্ড বলেছিল, বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতা গুরুতর নয়।
মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শে এক্সরে করাতে গত ১৪ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। তবে সরকারের গঠিত ওই মেডিকেল বোর্ড নিয়ে অনাস্থা জানিয়েছিল বিএনপি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া আথ্রাইটিসে ভুগছেন… তার সেবার জন্য একজন নারীকে আমরা কারাগারে অ্যালাউ করেছি। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যা যা প্রয়োজন আমরা কিন্তু সবই করে যাচ্ছি।
কামাল জানান, একজন ফিজিওথেরাপিস্ট একদিন পর পর কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়াকে থেরাপি দিয়ে আসেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, একজন ডাক্তার একজন ফার্মাসিস্ট প্রতিদিনই তাকে চেক করছেন। আমাদের আইজি প্রিজনস এটা জানিয়েছেন, তাদেরও জানিয়ে দিয়েছি।