বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারাকে পেছনে দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল
চট্টগ্রাম ব্যুারো
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন বলেছেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারাকে পেছনে দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল । তা থেকে আজো বেরিয়ে আসতে পারেনি জাতি। আমরা আশান্বিত। বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নতুন প্রজন্ম ঘরে দাঁড়িয়েছে আজ। তারা আজ আবার কাজ শুরু করেছে।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলছে, আদর্শিক লড়াই শুরু করেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা নবপ্রজম্ম।তিনি গতকাল ১৫ই সেপ্টেম্বর দুপুরে চমেক শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে আয়োজিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সহযোদ্ধা সম্মেলন ও নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। সহযোদ্ধা সম্মেলনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, বিএমএ চট্টগ্রাম শাখা সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান, সাধারণ সম্পাদক ডা.ফয়সল ইকবাল চৌধুরী,অধ্যাপক মনোয়ারুল হক শামীম,অধ্যাপক ডা. মাহবুব,বিএমএ চট্টগ্রাম সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মুইজ্জুল আকবর চৌধুরী, ডা. রেজোয়ান রায়হান, নুর হোসেন ভূঁইয়াসহ চমেক ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষনা করেন সিটি মেয়র আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন। ডা. ওয়াসিম সাজ্জাদ রানাকে সভাপতি এবং ডা. হাবিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসময় তিনি একে একে কমিটির সকল সদস্যকে সভায় পরিচয় করিয়ে দেন। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের যৌথ উদ্যোগে চমেকে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
সহযোদ্ধা সম্মেলনে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সামনে নির্বাচন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদেরকে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দলের স্বার্থকে সবার উপরে রেখে কাজ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষ হয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত শিবিরের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টোকেন নিয়ে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কিন্তু মনে রাখবেন তাদের নীতির কিন্তু কোনরূপ পরিবর্তন হয়নি।
এসব বর্ণচোরাদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় আমাদের নেতাকর্মীকে সতর্ক অবস্থান নিতে হবে।তাই এখন থেকে সংগঠনকে গতিশীল করতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমাদেরকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা ইসলামিক কলেজে অধ্যয়নকালীন সময়ে রাজনৈতিক দল গঠন করে জনসেবায় ব্রতী হয়েছিলেন।
১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের প্রধান সংগঠকের একজন ছিলেন শেখ মুজিব। ১৯৪৯ সালে নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদকের ৩টি পদের মধ্যে ১টি তিনি নির্বাচিত হন। এখান থেকে তাঁরা রাজনীতিক জীবন শুরু।
মেয়র বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন যে উদ্দেশ্যে পাক-ভারত বিভক্ত হয় পাকিস্তান সৃষ্টির অল্প কিছুদিন পরেই সে আশা হতাশায় পরিণত হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, উন্নয়ন সকল ক্ষেত্রে বাঙালিরা পাকিস্তানিদের হাতে শোষণের শিকার হতে থাকে। জাতির জনক পাকিস্তানিদের এই শোষণের গ্রাস থেকে জাতিকে মুক্ত করার প্রত্যয়ে নতুন দল গঠন করেন।
এই দলের নেতৃত্বেই শুরু হয় বাঙালির স্বাধীনতা,স্বাধিকার আন্দোলন। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের এক দফা আন্দোলন;’৭১-এ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু জীবনের অধিকাংশ সময় সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, বিত্ত-বৈভব বিসর্জন দিয়ে বাঙালিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু একজন রাজনৈতিক কর্মী থেকে নেতায় পরিণত হন এবং পরে বাঙালি জাতির প্রতি অসামান্য অবদানের কারণে তিনি রাষ্ট্র নায়কের পরিণত হন-যা খুব কম নেতার ভাগ্যে জুটে থাকে। দুরদর্শী নেতৃত্ব ও প্রজ্ঞার কারণে বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের কাছে পৌছাতে পেরেছেন।
যার ফলে তিনি অসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। আমাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন চর্চা করতে হবে। তার সুদীর্ঘ ত্যাগ-তিতিক্ষা,সংগ্রাম-বেদনার ইতিহাস,আদর্শ আমাদের নেতাকর্মীকে জানতে এবং অন্তরে ধারণ করতে হবে। মেয়র বলেন বাঙালি জাতির দুভাগ্য যে, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স-পরিবারে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলংকজনক অধ্যায় রচিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারাকে পেছনে দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর পূর্বে মেয়র বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সহযোদ্ধা সম্মেলন ও নবীন বরণ অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।