গোপালগঞ্জে নতুন রেলপথ উদ্ধোধন এ মাসেই : অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুর মাত্রা
নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ
গোপালগঞ্জের ৪৪ কিলোমিটার নতুন রেলপথ উদ্ধোধনের পর এ মাসেই চালু করা হবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিদর্শক খন্দকার শহীদুল ইসলাম জানান, এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সেতু, কালভার্ট, রেলগেট, রেলক্রসিং, স্টেশন, ট্রেন চলাচলের সিগন্যালসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। রেললাইনটি এখন ট্রেন চলাচলের উপযোগী হওয়ায় এ মাসের যে কোনো সময় এটি সবার চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হবে।
জেলার কাশিয়ানী থেকে গোবরা পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথ হয়ে গোপালগঞ্জ থেকে রাজশাহী সরাসরি মেইল ট্রেন চলাচল করবে। ২৬ সেপ্টেম্বর নবনির্মিত গোপালগঞ্জ-কাশিয়ানী-গোবরা সেকশনের রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়ে রেলের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করেছেন। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এ রেললাইন নির্মাণে ‘ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’ ও ‘তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’ ঠিকাদারির দায়িত্বে ছিল।
এ বছরের জুলাই মাসে রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ হয়। ম্যাক্স গ্রæপের সাইট ম্যানেজার আব্দুল ওহাব বলেন, এ প্রকল্পে ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থেকে সদর উপজেলার গোবরা পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার রেল লাইনে মধুমতি নদীর ওপর একটি রেলসেতু, ৪৩টি কালভার্ট এবং ছয়টি রেল স্টেশন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ জানায়, এই জনপদের মানুষের যাতায়াত সহজ করতে এবং ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে ১৯৩৫ সালে ভাটিয়াপাড়া-কালুখালী ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ চালু হয়েছিল। পরে লোকসান দেখিয়ে ১৯৯৭ সালে রেলপথটি স্থায়ী ভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
পরে ফরিদপুর, রাজবাড়ী এবং গোপালগঞ্জ জেলার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ভাটিয়াপাড়া-কালুখালী পরিত্যক্ত রেললাইন পুনঃনির্মাণ এবং কাশিয়ানী রেলস্টেশন থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার সম্প্রসারিত রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প ২০১০ সালে সরকারি ভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এদিকে দীর্ঘকাল অপেক্ষার পর গোপালগঞ্জে নতুন রেলপথ রেল চালুর খবরে উচ্ছাস প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলছেন, এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুর মাত্রা যোগ হলো। গোপালগঞ্জ জেলা বণিক সমিতির সভাপতি মো: কাজী জিন্নাত আলী বলেন, কাশিয়ানী থেকে গোবরা পর্যন্ত রেল লাইন চালু হলে জেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে অবদান রাখবে।
নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপিত হবে। শিল্প বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ফলে মানুষ কাজের সুযোগ পাবে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বি এম ওবায়দুর রহমান বলেন, রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলার মানুষের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। এতে যাতায়াতে সময় বাঁচবে, আর্থিক লেনদেন বাড়বে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। একই উপজেলার খাগাইল গ্রামের বাসিন্দা শিপন বলেন, নতুন রেল চালু হচ্ছে এমন খবরে আমাদের মাঝে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। আর রেল চালু হলে আমাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে। আমরা সহজেই দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করতে পারবো। গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র রংপুরের মো: বায়েজিদ বলেন, এটা উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই খুশির খবর। আমরা সহজেই ট্রেনে করে বাড়ি যেতে পারব। যাতায়াত ভাড়া কম লাগবে এবং যানজটের কবলে পড়তে হবে না।