দহগ্রামে ভারতীয় গরু ব্যবসা নিয়ে বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানের দ্ব›দ্ব
আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা এলাকায় ভারতীয় গরুর ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে চোরাকারবারী, জন প্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতাদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তাদের দ্ব›েদ্বর কারণে দফায় দফায় কয়েক শতাধিক ভারতীয় গরু আটক করেছে বিজিবি। ফলে অনেকটা ভেঙ্গে যায় ভারতীয় গরু ব্যবসা নিয়ে তৈরী সিন্ডিকেটটি। এতে দহগ্রাম ইউনিয়নের সীমান্ত গুলোতে হাজার হাজার ভারতীয় গরু প্রবেশের অপেক্ষায়। ভারতীয় গরু ব্যবসা নিয়ে একটি সমঝোতা করতে মঙ্গলবার রাতে পাটগ্রাম উপজেলার পানবাড়ী এলাকায় ওই সিন্ডিকেটের একটি বৈঠক হলেও কোনো সমঝোতা হয়নি। যে কারণে উত্তেজনা আরো বেড়ে গেছে। এ ছাড়া দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভারতীয় গরুর কারণে নিজেদের পালিত গরু বিক্রি করতে পারছে না তারা।
জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা ছিটমহল দিয়ে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশের গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমঝোতায় দীর্ঘদিন ধরে গরুর ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে। চোরাই ভাবে আসা গরু গুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে ৫ শত টাকা মূল্যে নিলামের কাগজ সংগ্রহ করে বৈধতা পায়। যাকে গরু করিডোর বলে। দহগ্রাম ইউনিয়ন থেকে প্রতি সপ্তাহে ৬০ টি গরু আসার অনুমতি আছে। দহগ্রামবাসীকে গরু বিক্রির জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিরিয়াল নিতে হয়। কিন্তু ওই ইউনিয়নের সীমান্ত গুলো দিয়ে প্রতিদিন শত শত ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আর এ গরু ব্যবসাকে নিয়ে গড়ে উঠে একটি বিশাল সিন্ডিকেট।
ফলে দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভারতীয় গরুর কারণে নিজেদের পালিত গরু বিক্রি করতে পারছেন না তারা। এতে তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এক জোড়া ভারতীয় গরু বাংলাদেশের হাটে বিক্রি করে সন্ধ্যায় গরু ব্যবসায়ীদের ওই সিন্ডিকেটকে দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। এ সিন্ডিকেট দিয়ে চলছে জমজমাট ভারতীয় গরুর ব্যবসা। প্রতিদিন ওই সিন্ডিকেটের আয় লক্ষ লক্ষ টাকা। ওই টাকার ভাগ রাতেই নাইনম্যান রিমন মাইনুলের মাধ্যমে চলে যায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার কাছে। এ ভাগ নিয়ে গত ১৫ দিন ধরে বর্তমান দহগ্রাম ইউ-পি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন ও প্রাক্তন ইউ-পি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সমর্থকদের মাঝে দ্ব›দ্ব দেখা দিলে বিজিবি’র হাতে আটকা পড়ে শত শত ভারতীয় গরু। ফলে কয়েক দিন ধরে ভারতীয় গরুর ব্যবসা অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতীয় গরু ব্যবসা নিয়ে এ দ্ব›দ্ব নিরসনে মঙ্গলবার রাতে পানবাড়ী এলাকায় একটি সমঝোতা বৈঠক বসে। কিন্তু কোনো সমঝোতা ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হওয়ায় উভয় গ্রæপের সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে যে কোনো মুর্হুত্বে বিদ্যামান গরু ব্যবসায়ীদের দুই গ্রæপের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশস্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের আঁধারে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মিলে টাকার বিনিময়ে এসব গরুকে বৈধতা দিয়ে সিরিয়াল দেন। ভারতীয় গরু প্রবেশের ফলে দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতাবাসী নিজের পালিত গরু বিক্রি করতে পারছে না। এ ছাড়া ভারতীয় গরু প্রবেশের কারণে লোকসানের মুখে পড়েছে দেশীয় গরু খামার মালিকরা।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল হোসেনসহ একটি সিন্ডিকেট ভারতীয় গরুর ব্যবসা করতে তৎপর হয়েছে উঠেছে। শুনেছি মঙ্গলবার রাতে পানবাড়ী এলাকায় ওই সিন্ডিকেটের একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বর্তমান চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে আমার দ্ব›দ্ব নয়, আমি আওয়ামীলীগের দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা এলাকায় নিরাপত্তার কথা ভেবে অবৈধ ভারতীয় গরুর ব্যবসার বিরোধীতা করছি।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন গরু ব্যবসায়ীদের ওই সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, বর্তমানে ভারতীয় গরু আসছে না। গরু ব্যবসা নিয়ে সাবেক ইউ-পি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সাথে আমার দ্ব›েদ্বর যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা সঠিক নয়। কোনো গরুর সিরিয়াল টাকায় বিক্রিও হয় না।
পাটগ্রাম থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আপাতত ভারতীয় গরু আসছে না। কেউ যদি ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ নষ্ট করতে চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।