ঝালকাঠির বারবাকপুর গ্রামে এক মায়ের কাটছে শেকলবন্দী জীবন।
ঝালকাঠির জেলার রাজাপুর উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের রিজিয়া বেগমের বয়স হয়ে গেছে ৭০ বছর। এই বয়সে তার স্থান হয়েছে গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ভিটায়। কোমরে বাঁধা শেকল। জীর্ণ কুটিরে তার সঙ্গী কেবলই একই শেকল। ঘরে নেই বেড়া। নোংরা কাঁথা-কাপড়। এমনকি প্রকৃতির ডাকও এখানেই সারতে হয়। অথচ ছেলে, ছেলের বউ, নাতি নিয়ে তার পরিপূর্ণ পরিবার।
বৃদ্ধার পুত্রবধূ নাসিমা বেগমের দাবি, তার শাশুড়ি পাগল হয়ে গেছেন অনেক দিন আগে। গত তিন বছর ধরে তাকে শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে স্বীকার করে নাসিমা বলেন, ওই বৃদ্ধা ছাড়া পেলে অন্যের বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন রকম ক্ষতি করে। নিজের ঘরও নোংরা করেন। আর মাঝে মধ্যে হারিয়েও যান। তাই তাকে শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।
রোববার (১২ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মশার কামড়, গরম কিংবা শীতে এখানেই পড়ে থাকেন রিজিয়া বেগম। ঘরটি বসবাসের অযোগ্য। ঘরে পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধযুক্ত বিছানা। সেখানে দুর্গন্ধে কারণে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর। বিছানার ওপর রাখা একটি মগ, পানির জগ, খানিকটা লবণ ও ময়লাযুক্ত একটি বাটিতে দেওয়া ভাত।
স্থানীয়রা জানান, ৩ বছর আগে ব্রেইন স্ট্রোক করেন রিজিয়া। সন্তান ও স্বজনরা অর্থাভাবে তার চিকিৎসা করাতে না পারায় আস্তে আস্তে মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকেন তিনি। এখন কথাও বলতে পারেন না ঠিকমতো।
তারা আরও জানান, প্রায় ২০ বছর পূর্বে স্বামী আব্দুল নিজাম উদ্দিন শেখকে হারান রিজিয়া বেগম। বর্তমানে ছেলে আব্দুর রাজ্জাক শেখ পেশায় কামার ও মেয়ে সালমা বেগম গৃহিনী। সালমার স্বামী উপজেলার রোলা গ্রামের দিনমজুর শুক্কুর হাওলাদার। আর্থিক অবস্থায় খারাপ হওয়ায় মেয়ে সালমাও মায়ের তেমন খোঁজখবর নিতে পারেন না। ছেলে রাজ্জাকও কামারের কাজ করে কোনোমতে ৪ সন্তানের পরিবার নিয়ে কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন।