কুড়িগ্রামে ধানের দাম নেই ঈদ কেনাকাটা নিয়ে সংশয়ে কৃষক
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামে এক মণ ধান বিক্রি করে এক কেজি মাংস কিনতে পারছেনা কৃষক। পরিবার পরিজনদের ঈদ কেনাকাটা নিয়েও দুশ্চিন্তায় ধান চাষীরা। ধানের দাম না থাকায় অনেকেই ঋণ করে ধান চাষ করলেও ঋণ পরিশোধ করতে বিপাকে পড়ছেন কৃষক।
ফলে এক প্রকার ঈদ আনন্দ নিয়ে উদ্বিঘœ সময় পার করছে চাষী। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেলে ধান চাষে কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলার আশংকা কর্তৃপক্ষের।
জেলায় আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাজারে নজির বিহীন ধস নামার কারণে নেই কৃষকের মুখে হাসি। বর্তমানে ৪৩০ হতে ৫০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হলেও বাজারে এক কেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৭০০টাকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কেজি প্রতি ৪০০ টাকার উর্দ্ধে বিক্রি হচ্ছে।
শাড়ি ৬০০টাকাসহ ছোট-বড়দের ঈদ পোশাকও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। ফলে দরিদ্র চাষীরা এক মণ ধান বিক্রি করেও কিনতে পারছে না এসব সামগ্রি।
এতে করে অনেক চাষী ঈদের কেনাকাটা করতে পারেনি। আসন্ন ঈদুল ফিতরে পরিবার পরিজনদের ঈদ আনন্দ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন কৃষক। এবারে বিঘা প্রতি ১০/১২ হাজার টাকা খরচ করে ফলন পেয়েছে ২০/২৩ মণ ধান।
বাজারে ধানের দাম না থাকায় কৃষকদের বিঘা প্রতি লোকসান গুণতে হচ্ছে দু/আড়াই হাজার টাকা। ধান বিক্রি করে সার, তেল, কীটনাশকসহ শ্রমিক মজুরির দাম উঠাতেই হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারো অনেকেই ধার দেনা করে চাষ করলেও সেই ঋণ পরিশোধ করতে বিপাকে পড়ছেন। এমন অবস্থা বিরাজ করলে আগামীতে ধান চাষে বিমুখ হবেন সাধারণ কৃষকগণ।
চিলমারী উপজেলার মাচাবান্দা গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হামার কি কেউ খবর নিবে হামার ক্ষতি হইলেই কি আর লাভ হইলেই বা কি?
রাজারহাট উপজেলার টগরাইহাটের কৃষক নজির মিয়া বলেন, এক বিঘা জমি বোরো ধান চাষ করতে এবার খরচ গেছে প্রায় ১০হাজার টাকা। ফলন পাইছি প্রায় ২১মণ। বর্তমান ধানের দাম হিসেবে ২১মণ ধান বিক্রি করলে হয় সাড়ে ৯হাজার টাকা। এলা বোঝো ধান চাষ করিয়া হামার লাভ কত?
ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গার কৃষক আব্দুল সাত্তার,বাদশা মিয়াসহ অনেকেই বিঘা প্রতি জমিতে বোরো ধান আবাদের খরচ তুলে ধরেন। তারা বলেন, দেড় প্যাকেট বীজ ৫০০টাকা, জমিতে হালচাষ ও বীজ রোপন করা মজুরীসহ সাড়ে ৩ হাজার টাকা, সেচ ও মেশিন ভাড়া আড়াই হাজার টাকা, সার-কীটনাশক স্প্রে করা আড়াই হাজার টাকা, জমি নিরানী ৫০০ টাকা,ধানকাঁটা-মাড়াইসহ সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
এতে করে এবার ধান চাষ করে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। এমন লোকসান হলে কৃষক ধান আবাদ করবে না। এক মণ ধান বিক্রি করে ১ কেজি মাংসও মেলে না।
ঈদের কেনাকাটা কিভাবে করব।
সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীর শিবরাম এলাকার কৃষক হাছেন,মিজান জানান,যে ঋণটা করছি। ধানের ফলন দেখিয়া মনে করছি বিক্রি করিয়া দেনা শোধ করমো। কিন্তু ্ঋণতো শোধ করা দূরের কথা আরো ঋণ করিয়া ধান কাটা নাগে। ঋণতো শোধ তো দূরের কথা উল্টো আরো ঋণে পরছি।
সরকার ১ হাজার ৪০ টাকা দাম ঠিক করে দিলেও সাধারণ কৃষক তো পায় না। তাই কৃষকদের দাবী ধানের দাম কমপক্ষে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ হলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।
ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় পুরুষ শ্রমিকরা চুক্তিভিত্তিক আর নারী শ্রমিক দিন মজুরি হিসেবে ধান কাটছেন।
শ্রমিক লীলাবতি, বুলবুলি খাতুন বলেন, ভাল ফলন হওয়া ৩শ টাকা এবং পুরুষ শ্রমিক ইয়াকুব, মজিবর জানান, আমরা ১২জনের একটি দল আছি।
চুক্তিভিত্তিক বিঘায় ধানকাটা-মাড়াইসহ ২হাজার ৮০০ টাকা নিচ্ছি। এতে করে সংসারে মোটামুটি স্বচ্ছলতা এসেছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাযায়, চলতি বোরো মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৮২ হেক্টর।
অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯১ হেক্টর। ফলন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন।
যা ৫ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বলেন, বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। এই কর্মকর্তা স্বীকার করেন,ধানের মূল্য না থাকায় কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এমন অবস্থা বিরাজ করলে আগামীতে ধান চাষে কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলার আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।