খালেদার ঈদ কাটবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কারা হেফাজতে
এক বছর তিন মাস (৪৭৭ দিন) ধরে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দুই দুর্নীতির মামলায় দ প্রাপ্ত হয়ে এবারও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ঈদ কাটবে কারা হেফাজতে। সম্প্রতি তাকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দ্বিতীয় দফায় নেওয়া হয়। সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। বেগম জিয়ার মুখে ঘা হয়েছে। এ কারণে নরম খাবার (ঝাউ) খেতে হচ্ছে। হাতের গিরায় গিরায় ব্যথা এখনো আছে। খাবার আগে এখন ডায়াবেটিস সাড়ে ১২।
তাই তার ওষুধেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন করে থেরাপিও দেওয়া হচ্ছে। নাম না প্রকাশের শর্তে চিকিৎসকরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেলেই তার ঈদুল ফিতর কাটবে। এদিকে কারাগারে যাওয়ার সময় বিএনপি রাজপথের ছোটখাটো কর্মসূচি দিলেও এখন চুপচাপ। দলটি বলছে, ঈদের পর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
জানা যায়, নিয়মিত রোজা রাখছেন বেগম জিয়া। কারাবিধি অনুযায়ী ৩০ টাকা সমপরিমাণে ইফতার সামগ্রী পাচ্ছেন তিনি। বাইরে থেকে কোনো খাবার সামগ্রী পাঠানো যায় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের খাবারই তাকে খেতে হয়। সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড বলেছে, বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো। খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জিলান মিয়া সরকার বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। ক্রমেই তার উন্নতি হচ্ছে।’ বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন গ্রেজুয়ালি ইম্প্রুভিং।
তার যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো ক্রনিক ডিজিজেস, এগুলো একটু সময় লাগে, খুব স্লো ইম্প্রুভ হয়। ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিসসহ অন্যান্য যে দুর্বলতা ছিল এগুলো অনেক উন্নতি হচ্ছে।’ তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চিকিৎসক নেতা অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, বেগম জিয়ার দুই হাতের গিরায় গিরায় ব্যথা এখনো ভালো হয়নি। মুখে ঘা হয়েছে। তার খাবার খেতে কষ্ট হয়। তাই ঝাউ জাতীয় নরম খাবার খেয়ে তিনি রোজা রাখেন। ডায়াবেটিস এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। রাতে মাঝেমধ্যে বমি হয়। সব মিলিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ভালো নেই। তার সুচিকিৎসা জরুরি।
জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে থাকা ৩৬ মামলার মধ্যে চারটি মামলা তার মুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে দি ত দুটি মামলা ছাড়াও দুটি মানহানির মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় সেগুলোতেও তার জামিন নিতে হবে। এর সঙ্গে উচ্চ আদালতে বর্তমানে অবকাশকাল চলছে। ফলে ঈদুল ফিতরের আগে এসব মামলায় জামিনের সব প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন তার আইনজীবীরা।
আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলার ৫টিতে দুর্নীতির অভিযোগে আছে। সেগুলো হলো- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা।
এ পাঁচটি মামলাই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (এক-এগারোর সময়) করা। আর বাকি মামলাগুলো হরতাল অবরোধে নাশকতার মাধ্যমে মানুষ হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালন ও ঋণখেলাপির অভিযোগে বর্তমান সরকারের সময়ে করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে।
একই সঙ্গে ওই আবেদনে খালেদা জিয়ার জামিনও চাওয়া হয়েছে। আর জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের সাজা ও অর্থদে র রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেছে খালেদা জিয়া।জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এখন মুক্তি পেতে হলে খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ, জিয়া চ্যারিটেবল ও ঢাকার মানহানির দুই মামলায় জামিন নিতে হবে।’
চুপচাপ বিএনপি : এক বছর তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। প্রথম দিকে তার মুক্তির দাবিতে বিএনপি মানববন্ধন, প্রতীকী অনশনসহ রাজপথে ছোটখাটো কর্মসূটি পালন করলেও এখন একেবারেই চুপচাপ দলটি। মাঝেমধ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো রাজপথে ঝটিকা মিছিল করছে।
দলের আইনজীবী নেতারা বলছেন, বেগম জিয়ার জামিনে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। নেতাদের কেউ কেউ রমজানের পর পর বড় কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে। আরেকপক্ষ বলছে, দল গুছিয়ে আন্দোলনে যেতে হবে।
এরই অংশ হিসেবে অঙ্গ সংগঠন ও জেলা বিএনপির অসম্পূর্ণ কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে। ঈদের পর নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা করে মাঠ নেতাদের পরামর্শ নিয়ে আন্দোলনে যেতে পারে বিএনপি।