পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দেশীয় শ্রমিকদের ক্ষোভের নেপথ্যে চীনাদের 'অকথ্য নির্যাতন'
পটুয়াখালীর পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চীনা ও বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশি শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের নির্যাতনের পাশাপাশি রয়েছে বেতন বৈষম্য। শ্রমিকদের এমন নানা অভিযোগ বেরিয়ে এসেছে সংঘর্ষের ঘটনার পর। আর পরিস্থিতি সামাল দিতে এসে জেলা প্রশাসকও যার সত্যতা পেয়েছেন।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে লণ্ডভণ্ড পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। নিস্তব্ধ হয়ে গেছে চীনা ও বাংলাদেশী শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের দাবি, সামান্য ভুলের কারণে বহুতল ভবন থেকে লাথি মেরে বাংলাদেশি এক শ্রমিককে ফেলে দেয় চীনা শ্রমিকরা। আর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ায় লাশ গুম করার চেষ্টা করেছে তারা। এ কারণেই ক্ষিপ্ত হয় বাংলাদেশি শ্রমিকরা, শুরু হয় সংঘর্ষ।
শ্রমিকরা বলেন, 'আমাদের এক দেশী ভাইকে একজন চীনা শ্রমিক লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। মারা যাওয়ার আগে সে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত জীবিত ছিল। পরে মারা গেলে তার আইডি কার্ড ও লগ শিট ছিঁড়ে ফেলে। সেই সঙ্গে তারা চেষ্টা করেছিল লাশটাকে যেভাবে হোক গুম করে দেয়ার জন্যে।'
চীনা শ্রমিকদের এমন নির্যাতন একদিনের নয়, বিগত দিনেও কথায় কথায় নানাভাবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নির্যাতন করা হয়েছে বলে দাবি তাদের। এদিকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজে নেয়ার আগে ২২ হাজার টাকা বেতন, বোনাস ও নির্ধারিত ছুটি দেয়ার কথা বলা হলেও তারা তা দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ শ্রমিকদের।
দু'জন শ্রমিক বলেন, প্রতিদিন মাত্র ৩৪০ টাকা দেয়া হয়। আমাদের প্রায় ১৩ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এছাড়া জীবনের ঝুঁকি তো আছেই। শুক্রবারেও ডিউটি করতে হয়। কোন ওভারটাইম নাই। কথায় কথায় লাথি মারে।
এদিকে বুধবার (১৯ জুন) সারাদিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সমস্যা সমাধানে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকদের এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে জানালেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউর ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, 'চায়না কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ৩টি আলাদা তদন্ত কমিটি করবেন বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক।