মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ৭০ হাজার টাকায় হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি!
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা হাত বাড়ালেই পাচ্ছেন বাংলাদেশি পাসপোর্ট। ৭০ হাজার টাকায় মিলছে জন্মনিবন্ধন, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটসহ পাসপোর্ট তৈরির কাগজ ও পাসপোর্ট।
চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আবু সায়েদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আমাদের অবস্থান কঠোর। কোনো পাসপোর্ট ভেরিফেকিশন করার আগে কাগজপত্র ভালোভাবে পর্যালোচনা করা হয়। গত এক বছরে মনসুরাবাদে পাসপোর্ট করাতে এসে আটক হয়েছেন ৫৪ জন রোহিঙ্গা।’ পাঁচলাইশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক আল আমিন মৃধা বলেন, ‘কয়েক মাসে পাসপোর্ট করতে এসে আটক হয়েছেন বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা।’ অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের দায়সারা পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের কারণেই রোহিঙ্গাদের হাতে যাচ্ছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট। অবশ্য, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে এ আলম মিনা ও সিএমপির বিশেষ শাখার উপকমিশনার ওয়ারিশ আহমেদ বলেন, ‘পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের নীতিমালা অনুসরণ করেই কাজ করে পুলিশ। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে যদি কারও গাফিলতি থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করে দেয় এমন কয়েকটি চক্র সক্রিয় রয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। এ চক্রে রয়েছেন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ও কর্মকর্তা, পুলিশ ও পাসপোর্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কক্সবাজারের দালাল। তারা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করতে ৭০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত নেন। একেকটা পাসপোর্ট তৈরিতে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পান ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনের জন্য পুলিশ সদস্য নেন ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আর দালাল চক্রের সদস্য ও ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ও কর্মকর্তা ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি বাবদ ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একসময় ভুয়া কাগজপত্র দিয়েই রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির চেষ্টা করত দালাল চক্রের সদস্যরা। এখন রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে আসল জন্মনিবন্ধন, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয়পত্র। এমনকি ভুয়া মা-বাবা হিসেবে আনা হচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিককে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার মিল তো রয়েছেই। দালাল চক্রের নতুন নতুন কৌশলের কারণে অনেক সময় রোহিঙ্গা শনাক্ত কঠিন হয়ে পড়ে। তারপর অফিসের কর্মকর্তাদের দূরদর্শিতার কারণে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করতে আসা রোহিঙ্গারা গ্রেফতার হচ্ছেন।’
পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘কারও পাসপোর্ট ইস্যু করা না করার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনের ওপর। পুলিশ যদি স্বচ্ছভাবে ভেরিফিকেশন করে তাহলে কোনো অবস্থাতেই রোহিঙ্গাদের পক্ষে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব হবে না।’