নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মচারীর পাশাপাশি অস্থায়ী কর্মচারীরাও। রাতেই রোহিঙ্গাদের তথ্য সার্ভারে যুক্ত করতেন
গত চার বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের এনআইডি সার্ভারে রোহিঙ্গাদের তথ্য সংযুক্ত করে আসছে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মচারীর পাশাপাশি অস্থায়ী কর্মচারীরাও। রাতেই রোহিঙ্গাদের তথ্য এনআইডি সার্ভারে যুক্ত করতেন তারা। আর এ কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সফটওয়্যার সংবলিত ল্যাপটপ, বিশেষ মডেম, ডিজিটাল সিগনেচার প্যাড এবং ওয়েব ক্যাম। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এবং নির্বাচন কমিশনের তদন্তে বের হয়ে আসছে এমন তথ্য।
২০১৪ সাল থেকেই নির্বাচন কমিশনে প্রকল্পের কর্মচারী হিসাবে কাজ করছিলেন মোস্তফা ফারুক। মাঝে কিছু দিন বিরতি দিয়ে ২০১৮ সাল থেকে আবারো নির্বাচন কমিশনে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। এ সময়ের মধ্যে শত শত রোহিঙ্গার নাম ঢুকিয়েছেন বাংলাদেশের এনআইডি সার্ভারে। প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি জেলা এবং উপজেলার নির্ধারিত পাসওয়ার্ড জানতেন মোস্তফা। এমনকি চুরি করে নেয়া ল্যাপটপের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের ল্যাপটপ দিয়েও রোহিঙ্গাদের তথ্য যুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, নির্বাচন অফিসে তার যাতায়াত ছিল। নিজের কাজ শেষ করে রোহিঙ্গাদের ফাইল সার্ভারে ঢুকিয়ে দিত।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে, দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের আনা হতো জয়নাল আবেদীন এবং মোস্তফা ফারুকের বাসায়। ছবি তোলা থেকে শুরু করে ডিজিটাল স্বাক্ষর নেয়া সব কিছুই করা হতো সেখানে।
সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তদন্ত কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া বলেন, সাইনিং পেইজে যখন সে কাজ করতো তখন সে ভোটার আইডির সাইন বিভিন্ন তথ্য নিয়ে রাখত। যা তার পেনড্রাইপে পাওয়া গেছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক তদন্তে বের হয়ে এসেছে জয়নাল এবং মোস্তফা ফারুকসহ এ চক্রের সদস্যরা রাতেই এনআইডি সার্ভারে সংযুক্ত করত।
নির্বাচন কমিশন তদন্ত টিমের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শাহবুদ্দিন বলেন, প্রতিটি ডাটা রাত আটটা ৯টায় আপলোড হয়েছে। এ কাজগুলো সে অফিসের মডেম চুরি করে করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ অনিয়ম রোধে ব্যর্থতার দায়ভার নির্বাচন কমিশনের বলে মনে করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি।
চট্টগ্রাম সনাকের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার কবীর চৌধুরী বলেন, এটা জাতীয় নিরাপত্তা আর হুমকির ব্যাপার। নাগরিক হিসেবে আমরা এমন কাজে আতঙ্কিত। হয়তো আরো অনেক জায়গায় এমন কাজ হচ্ছে। এটা বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
অনুসন্ধানে তিনটি ল্যাপটপসহ গ্রেফতার করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন এবং অস্থায়ী কর্মচারী মোস্তফা ফারুকসহ ৫ জনকে।