নায়িকার হাজার হাজার ফ্যান ফলোয়ার, সিনেমা হলে দর্শক গুটি কয়েক
বর্তমানে সময়ে শাকিব খানের তুলনা নেই। তবে এমন কথা কোনও নায়িকাকে নিয়ে বলা যায় না। একসময় ঢাকাই সিনেমার এ নায়ক অপু বিশ্বাস, শাবনুর, পূর্ণিমার সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন। কিন্তু তারা অনিয়মিত হওয়ার কারণে শাকিব খান নতুন নতুন নায়িকা নিয়ে আসার চেষ্টাও করছেন। কিন্তু সফল হচ্ছেন না ঢাকাই সিনেমার কিং খান খ্যাত এ নায়ক।
দেশীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকা সংকট কোনও কালেই ছিল না। তবে সম্প্রতি কয়েক বছর থেকে ঢাকাই সিনেমায় নায়িকার সংকট দেখা মিলছে। শাকিব খান-অপু বিশ্বাস জুটির পর দেশে নতুন করে কোনও নায়িকার আগমন ঘটেনি চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতদিন যারা এসেছেন শুধু তারা নিজেরা চলচ্চিত্রের ব্যানার তৈরি করতে এসেছেন, নায়িকা নয়। শিল্পবান্ধব মনোবাসনা না থাকায় চলচ্চিত্রে নায়িকা সংকট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুবলীগ নেতা জি কে শামীম কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সে তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সেটা থেকে ধারণা করা যায় চলচ্চিত্র শুধু তারা সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করতেন। শুধু চলচ্চিত্রের নাম নিয়ে বড় বড় নেতাদের শয্যাসঙ্গী হয়ে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। আর এ কারণে চলচ্চিত্রের বর্তমান নায়িকা সংকটে পড়েছে।
সরেজমিনে চায়ের দোকানদার, পথচারী, রিকশাচালক, সিকিউরিটি গার্ড, ছাত্রছাত্রীদের কাজে জানতে চাওয়া হয় বর্তমান প্রজন্মের নায়িকাদের সম্পর্কে। প্রত্যেকেই বলেছেন নতুন কোনও নায়িকাকে চিনেন না কেউ। এ তালিকায় ছিলেন, নিঝুম রুবিনা, আইরিন, মিষ্টি জান্নাত, রোদেলা জান্নাত, রাহা তানহা খানসহ বেশ কয়েকজন নতুন নায়িকার নাম।
তবে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা বলছেন, বর্তমানে ফেসবুকে তারা সেলিব্রেটি। তাদের নাম দিয়ে সার্চ দিলে হাজার হাজার ফ্যান ফলোয়ার দেখতে পাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু সিনেমায় তাদের কাজ নগন্য।
চলচ্চিত্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিচালক বলেন, ‘আমি নায়িকা হতে চাই, এই ইচ্ছা থাকলে বাংলা সিনেমায় এখন নায়িকা হওয়া যায়। আর ফেসবুকে দর্শক পরিচিতি পেতে আগের নায়িকাদের মতো অভিনয় করতে হয় না। তাদের ফেসবুকে হাজার হাজার ফ্যান ফলোয়ার আর শয্যাশয়ী বন্ধু প্রযোজকদের কারণে চলচ্চিত্রে নায়িকা হয়ে যায়। এসব বিশেষ কারণে আজ চলচ্চিত্রে নায়িকা সংকট।’
তখনকার সময় যেসব নায়িকা যতবার পর্দায় এসেছেন নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন, ছুঁয়েছেন দর্শকের মন। কালের বির্তনে তারা হারিয়ে যাননি। এতটুকু অভিনয় তাদের মলিন হয়নি। সে সময় মিষ্টি মেয়ে কবরী, সুচরিতা, ববিতা, শাবানা, রোজিনা, দিতি, চম্পা প্রত্যেকেই হেঁটেছেন তাদের দেখানো পথেই। সেই ধারাই অব্যাহত হয়েছিল নব্বই দশকে।
নব্বই দশকে এসে ঢালিউড সিনেমায় নায়িকা হিসেবে দর্শকের মনে ধরা দেন মৌসুমি, শাবনুর, শাবনাজ, পপি, পূর্ণিমারা। পরবর্তী সময়ে অপু বিশ্বার আসলে এরপর আর কোন নায়িকাকে পাওয়া যায়নি ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে। এরপরই সবকিছু অন্ধকারেই রূপ নিয়েছে। ধস নেমে গেল বাংলা চলচ্চিত্রের।
নির্মাতা রাশিদ পলাশ বলেন, ‘এখন চলচ্চিত্রে প্রত্যেকে নাম কামানোর জন্য আসে। তারা নায়িকা হতে আসে, শিল্পী হতে আসে না, এরা নায়িকা নয়। এদের নায়িকা বলা যায় না। হারিয়ে যাচ্ছে সেই সময়কার চলচ্চিত্র। এখন তৈরি হচ্ছে না মনে দাগ কাটার মতো চলচ্চিত্র। তৈরি হচ্ছে আর কোনও লিজেন্ড। এখন চলচ্চিত্রের অগ্রতির চেয়ে অধঃপতন হচ্ছে গত এক দশক থেকে। তবে উত্তরণের জন্য শিল্পী বাসনার মন আর সেই সঙ্গে ভালো নির্মাতা ও গল্পের প্রয়োজন।’