শ্বাসরুদ্ধকর ও সংকটময় সেই ১২ ঘণ্টা
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টা থেকে পরদিন সকাল সোয়া ৯টা। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় ১২ ঘণ্টা। শুধু হলি আর্টিজান নয়, ওই ১২ ঘণ্টা জিম্মি ছিল পুরো দেশ। সেদিন ছিল শুক্রবার। ইফতার শেষে নগরবাসী যখন তারাবি নামাজে ব্যস্ত তখন হঠাৎ করে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে খবর আসে গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কে বিদেশিদের পছন্দের হলি আর্টিজান বেকারি এলাকায় গোলাগুলি হচ্ছে। কেউ বলছিল গুজব, আবার হোটেলে চাঁদাবাজ এসে বিশৃঙ্খলা করছে বলে শোনা যাচ্ছিল।
রাত ১০টা নাগাদ ৭৯ নম্বর সড়ক ঘিরে অবস্থান নেয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি। ঘটনা কাভার করতে ছুটে যান গণমাধ্যমকর্মীরাও। ঘটনার ভয়াবহতায় থমকে যায় পুরো দেশ। খবর আসে হলি আর্টিজানের মধ্যে সবমিলিয়ে ২৪ জন বিদেশি নাগরিকসহ প্রায় অর্ধশত লোক জিম্মি রয়েছে। এসবের মধ্যেই রাত ১১টা ১৫ মিনিটে ওসি সালাউদ্দিনের মৃত্যুর খবর আরও শঙ্কিত করে তোলে বিশ্ববাসিকে। জিম্মিরা বেঁচে আছে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে এমন শঙ্কা নিয়ে যখন সবাই উদ্বিগ্ন তখনই রাত সাড়ে ১২টার দিকে জঙ্গিদের বার্তা সংস্থা হিসেবে পরিচিত ‘আমাক’ পুরো বিশ্বকে স্তম্ভিত করে ২০ জন বিদেশি নাগরিক হত্যার খবর প্রকাশ করে। পাশাপাশি হামলাকারী ৫ স্বশস্ত্র জঙ্গিরও ছবি প্রকাশ করে টুইট করে সাইট ইন্টেলিজেন্স।
এদিকে হামলার ভয়াবহতা বিবেচেনায় রাত সাড়ে ৩টার মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সেনাবাহিনীর ৭০ সদস্যের প্যারা কমান্ডো টিম। হলি আর্টিসানের আশপাশের বিভিন্ন লেকে অবস্থান নেয় স্বশস্ত্র নৌ বাহিনীর সদস্যরা। ইতিহাসের নির্মম কালো রাতের আঁধার কেটে যখন জুলাইয়ের ২ তারিখের সূর্য উকি দেয় তখন পুরো গুলশান প্রস্তুত হলি আর্টিজানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে। অভিযানের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির সময় ভোর ৬ টা ১৫ মিনিটে ভেতর থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমসহ ৬ জন জিম্মি। তাদের নিরাপদে নিয়ে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি নেয় সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি।
সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কমান্ডো বাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্ট। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে টানা ১৩ মিনিট প্রকম্পিত থাকে পুরো গুলশান এলাকা। ধরাশায়ী হয় জঙ্গিরা। সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে রক্তে ভেসে যাওয়া হলি আর্টিজান নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সোয়া ৯টায় কমান্ডো অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে অভিযানকারীরা। সকাল ১০টার কিছু পর অভিযানকারীরা ৪ জন বিদেশিসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার এবং অভিযানে ৬ জন নিহত হওয়ার খবর জানায়।
দুপুরে জঙ্গি হামলায় ২০ বিদেশি নিহত হয়েছে বলে জানায় আইএসপিআর। আর এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে দেশের ইতিহাসের অন্যতম শ্বাসরুদ্ধকর ও রক্তাত্ত জিম্মি সংকটের।