ওয়াসার ‘শব্দ সন্ত্রাসে’ রাতের ঘুম হারাম
পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ বা ওয়াসা বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশনের কাজে নিয়োজিত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সেবামূলক ও বাণিজ্যিক এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজধানীবাসীর জন্য সুপেয় পানির জোগানদাতা ঢাকা ওয়াসার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। পানি সঙ্কট ও পানিতে মাত্রাতিরিক্ত দুর্গন্ধ ও ময়লা এসব পুরোনো অভিযোগ।
সম্প্রতি পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ওয়াসার কর্মকাণ্ডে বিপত্তিতে পড়েছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার টিক্কাপাড়ার বাসিন্দারা। ওয়াসার কাজের টেন্ডারপ্রাপ্তরা মধ্যরাতে বিকট শব্দ করে কাজ করায় ওই এলাকার বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েছেন। ওয়াসার এ ‘শব্দ সন্ত্রাসে’ উদ্বিগ্ন ওই এলাকার হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কাজে শ্রবণ শক্তি হারানো ছাড়াও মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। বিষয়টিকে তেমন উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু মনে না করলেও ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
বুধবার রাত ৩টা। টিক্কাপাড়া পানির পাম্প এলাকায় হুট করেই শুরু হয় বিকট আওয়াজ। হাড় কাঁপানো এ শীতের রাতে তীব্র শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সেখানকার শতাধিক বাসিন্দার। গভীর রাত হওয়ায় তারা তখন বুঝতেই পারছিলেন না কীসের এত শব্দ? এ অবস্থায় সেখানকার মেহেদী হাসান নামের এক বাসিন্দা মোহাম্মদপুর থানায় ফোন করেন। তখন থানা থেকে ওই এলাকায় টহলকারী দলের প্রধান সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবুল কালাম আজাদকে বিষয়টি সুরহার নির্দেশনা দেয়া হয়। আবুল কালাম পানির পাম্প এলাকায় এসে দেখতে পান এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। রাতে পৌনে ৫টায় ওই শব্দ বন্ধ করে আবুল কালাম তাকে জানান, ওয়াসা এমন বিকট আওয়াজ করে কাজ করছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাদের এ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় পুলিশ।
সেখানকার হৃদরোগ আক্রান্ত এক বাসিন্দা বলেন, রাত তিনটার দিকে হুট করেই বিকট শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। প্রথম প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। পরে জানতে পারলাম, ওয়াসার লোকজন এমন শব্দ করে কাজ করছে।এলাকার লোকজন যে পরিমাণ ভয় পেয়েছিলেন তার থেকেও ভয়ঙ্কর ঘটনা এমন কাণ্ডে ঘটতে পারে বলে মত পরিবেশ বিজ্ঞানীদের। বিষয়টি নিয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার সময় নিউজকে বলেন, রাতের বেলার শব্দে শ্রবণ শক্তি নষ্টের পাশাপাশি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে শিশু, বয়স্ক ও হৃদরোগীরা।
হঠাৎ করে বিকট শব্দ হলে হৃদরোগীদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, হুট করে বিকট শব্দে গর্ভবতীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ এতে নবজাতকের ব্রেন ড্যামারেজ পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও হজমের সমস্যাও হতে পারে এমন ঘটনায়। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে টিক্কাপাড়া পানির পাম্পের অপারেটর আব্দুস সালামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এটা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বাইরে আছি। আজ অফিসে ফিরছি না। বিষয়টি নিয়ে পরে কথা বলা যাবে। এরপর যোগাযোগ করা হয় ওই অঞ্চলের ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ কাজ টেন্ডারে দেয়া হয়েছে। তবে টেন্ডারে রাতে এভাবে কাজ না করার জন্য নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। আমরা টেন্ডারপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।