মানসিক নিপীড়নের শিকার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ছাত্রী র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার মালিকানাধীন ছাত্রী মেসে বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দফায় এক ছাত্রীকে র্যাগ দেওয়া হয়। অপর এক ছাত্রীও র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে অসুস্থ হন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী জানান, ফেব্রুয়ারির শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেকপোস্ট সংলগ্ন ছাত্রী মেসে অন্য নতুন ছাত্রীদের সঙ্গে তারাও কক্ষ ভাড়া নেন। সোমবার তাদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বুধবার তাদের কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান সিনিয়ররা। সেখানে র্যাগিংয়ের শিকার হন তারা। তাদের একজন সেদিনই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে অপর এক ছাত্রীকে আবার ডেকে পাঠান সিনিয়র ছাত্রীরা। সেখানে দ্বিতীয় দফায় তার সঙ্গে ওড়না না থাকায় ও সুরা বলতে না পারায় মানসিক নিপীড়ন করা হয়। এরপর ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি কক্ষে ফিরে যাওয়ার সময় সিঁড়ি থেকে পড়ে যান। তাকে বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরবর্তীতে বমি করলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই ছাত্রী জানান, পরে তাকে দেখতে হাসপাতালে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. শেখ সুজন আলী, সহকারী প্রক্টর ও নাট্যকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আল-জাবির, অগ্নিবীণা হলের হাউস টিউটর মাসুদুল মান্নান ও নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক মুশফিকুর রহমান হীরক। মেয়ের ওপর নিপীড়নের খবর পেয়ে তার মা ক্যাম্পাসে আসেন বৃহস্পতিবার সকালে।
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে অমানবিকভাবে র্যাগ দেওয়া হয়েছে। তাকে পোশাক পরা, সুরা বলা এসব বিষয়ে র্যাগ দেওয়া হয়েছে। আমার মেয়ে কী পোশাক পরবে সেটা আমি ঠিক করব। ওরা কে এসব নিয়ে কথা বলার’। তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন দায়িত্ব নিতে না পারলে আমার মেয়েকে এখানে পড়াব না’। তবে ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী নিরাপত্তাজনিত কারণে জড়িতদের নাম তাৎক্ষণিক সাংবাদিকদের সামনে উল্লেখ করেননি।
শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী প্রক্টর ও নাট্যকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আল-জাবির বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলব। আমি আমার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা না দিতে পারলে আমার দায়িত্বে থাকার কী দরকার। শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে এটি স্পষ্ট যে তার ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে এবং এতে সে ভীত হয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে সে সিঁড়ি থেকে পড়ে আহত হয়েছে। এই শিক্ষার্থী একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, এই মানসিক নির্যাতন যারা করেছে তার বিচার না করতে পারলে আমি আমার সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করব’।
অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক উপদেষ্টা ড. শেখ সুজন আলী বলেন, ‘র্যাগিং নিয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুততম সময়ে এই সমস্যার সমাধান করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন’। প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, রবিবারের মধ্যে এই বিষয়ের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মেয়েটির বিষয়ে অবগত। এর সঙ্গে যারা যুক্ত থাকুক, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে চার সদস্যের একটি অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি গঠন করে দিয়েছি। খুব দ্রুতই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের এই ক্যাম্পাসে র্যাগিংয়ের নামে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলবে না। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ এই ঘটনায় জড়িতদের বিচার চায় বলে জানিয়েছে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমিটি রবিবার সকাল ১০টায় র্যাগিং বিরোধী কর্মসূচি পালন করবে। এর আগে র্যাগিংয়ের স্বীকার হয়ে সিএসই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থীও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রশাসন জানায়, অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন ড. শেখ সুজন আলী, সদস্যসচিব প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, সদস্য হিসেবে রয়েছেন দুই হল প্রভোস্ট।