ভাঙা যাচ্ছে না বিজিএমইএ ভবন
প্রায় এক মাস আগে হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজের উদ্বোধন করা হয়েছিল। কিন্তু ভবনটি ভাঙার কাজ এগোয়নি একটুও। কারণ কী?
গত ২২ জানুয়ারি বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ উদ্বোধন করেন সেসময়ের গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। পরদিন থেকেই পুরোদমে ভাঙার কাজ শুরুর কথা ছিলো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার গ্রুপের। কিন্তু ২৬ দিনেও ভবন ভাঙ্গার কাজটি শুরু হয়নি। এরমধ্যেই গত সপ্তাহে গণপূর্তমন্ত্রীর দপ্তর বদল হয়েছে। তিনি এখন আছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজিএমইএ’র কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের (ডিপিডিসি) বকেয়া বিল ছিলো। এ কারণে আগেই তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এই বকেয়ার মধ্যে কিছুটা তারা পরিশোধ করেছে। তারপরও দুই লাখ ৫৮ হাজার টাকা পাওনা রয়ে গেছে। যেকারণে ভবন ভাঙার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ফোর স্টার গ্রুপ বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়েও পাচ্ছে না।
তারা ওয়াসার কাছে পানির সংযোগও চেয়েছিল। কিন্তু তাও মেলেনি। কারণ বিজিএমই ভবনে ওয়াসার পানির লাইন নেই। গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি তোলা হতো সেখানে। ফোর স্টার গ্রুপ নিজস্ব উদ্যোগে গভীর নলকূপটি চালু করতে চাইলেও বিদ্যুতের অভাবে তাও সম্ভব হচ্ছে না। নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে তারা কাঁচ খোলা এবং ময়লা অপসারণের কাজ শুরু করছে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় ভবন ভাঙার ভারী যন্ত্রপাতি চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
ফোর স্টার গ্রুপের পরিচালক নাসিরুল্লাহ খান বলেন, ‘‘তারা (ডিপিডিসি) সংযোগ দেবে বলেছেন। আমরা সোমবার পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য অপেক্ষা করব। না পেলে আমরা কাজ বন্ধ করে দিব। কারণ আমারা হ্যামার দিয়ে এই ভবন ভাঙবো। ওই হ্যামার বিদ্যুৎ ছাড়া চালানো সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ শুরুর সময়ই বিদ্যুৎ লাইনের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু বিজিএমইএ’র কাছে বকেয়া বিল থাকায় আমাদের সংযোগ দিচ্ছে না।’
ভবনটি ভাঙার জন্য ফোর স্টার গ্রুপ কাজ পেয়েছে রাজউকের কাছে থেকে। চুক্তি অনুযায়ী এজন্য তারা কোনো টাকা পাবে না। উল্টো রাজউককে এক কোটি দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। বিনিময়ে ভবনের ভাঙ্গা অংশ তারা নিয়ে যাবে।
নাসিরুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে বিক্রি করে ব্যবসা করব আশা করেছিলাম। এখন যা পরিস্থিতি তাতে লোকসান গুনতে হবে। ১৭০ জন কর্মীকে বসিয়ে রেখেছি। ওখানে তাদের পানিও কিনে খাওয়াতে হয়।’
জানা গেছে নানা জটিলতায় ফোর স্টার গ্রুপকে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ঘুরতে হয়েছে। তখনকার গণপূর্তমন্ত্রী সব সংস্থাকে তাদের সহযোগিতার জন্য বললেও বিদ্যুৎ বিভাগ ও ওয়াসা তা আমলে নেয়নি।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি) যোগাযোগ করে জানা গেছে, বিজেএমইএ’র বকেয়ার পাশাপাশি কিভাবে ওই ভবনে বিদ্যুতের পুনঃসংযোগ দেয়া হবে তা বের করতেই এত সময় চলে গেছে। এ নিয়ে তারা অনেক ফাইল চালাচালি করেছেন। প্রয়োজনীয় বোর্ড, মিটার ও সুইচও স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি সংযোগ দিতে পারেনি। তবে শেষ পর্যন্ত কাকরাইল স্টেশন থেকে সংযোগ দেয়ার একটি প্রক্রিয়া চলছে।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান রোববার বলেন, ‘আমরা দুই-একদিনের মধ্যেই ওই ভবনে রাজউক-এর নামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেব, ফোর স্টার গ্রুপকে নয়। ফোর স্টার গ্রুপ আগেই সংযোগের আবেদন করেছিলো। বিজিএমইএ’র আড়াই লাখ টাকার মতো বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো।
আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওই বকেয়া টাকা বিজিএমইএ’র জামানত থেকে কেটে রাখতে বলেছি। ফোর স্টার গ্রুপ যে বিদ্যুৎ খরচ করবে তার বিল আমরা রাজউকের কাছ থেকে নেব।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাতিরঝিলের উপর গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ওই রায়ে ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর আপিল বিভাগও সেই রায় বহাল রাখে। ডয়চে ভেলে