সীমান্তহত্যা বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিল বিএসএফ
আগামীতে সীমান্তে হত্যা বন্ধের পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে আবারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএসএফ। বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকে এ ধরনের আশ্বাস দেন বিএসএফের ডিআইজি কুনাল মজুমদার।
বুধবার রাজশাহী সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। সীমান্তে হত্যা বন্ধে রাজশাহীর সোনাইকান্দি বিওপির ওপারে পদ্মার চরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসএফ এই পতাকা বৈঠকের আয়োজন করে।
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের বহরমপুর সেক্টরের ডিআইজি কুনাল মজুমদারের নেতৃত্বে ৩৫ ব্যাটেলিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ বৈঠকে হাজির হন। বিজিবির পক্ষে দেন, রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তুহিন মাসুদ।
বৈঠকে অংশ নেয়া এক বিজিবি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে রাজশাহী অঞ্চলে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। গত এক মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তে অন্তত নয়জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। কেউ ভুল করে ভারতীয় সীমানায় অনুপ্রবেশ করলে রেওয়াজ অনুযায়ী পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিজিবির কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ জানানো হয়।
বৈঠকে গত ৩১ জানুয়ারি রাজশাহীর পবা উপজেলার সোনাইকান্দি বিওপি এলাকায় পদ্মা নদী থেকে পাঁচ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তোলা হয়। বিএসএফ কমান্ডারকে বিজিবি জানায়, বাংলাদেশের ভেতরে পদ্মা নদীতে স্পিডবোটে করে তেড়ে এসে তাদের তুলে নিয়ে যায় বিএসএফ। ধরে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ফুটেজও দেখানো হয়েছে বিএসএফকে।
বিজিবির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, এ ঘটনার পর প্রথম দফায় পতাকা বৈঠকে বসার প্রতিশ্রুতি দিলেও বিএসএফ হাজির হয়নি। পরে পতাকা বৈঠক হলেও বাংলাদেশি পাঁচ জেলেকে মুক্তি দেয়া হয়নি। বরং উল্টো ভারতীয় ভূ-খণ্ডে অনুপ্রবেশের অভিযোগ এনে তাদের মুর্শিদাবাদ পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। জবাবে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডে দুঃখ প্রকাশ করে বিএসএফ পাল্টা অভিযোগ করেছে। বিএসএফ বলেছে, গরু চোরাকারবারীরা বিএসএফের বাধা উপেক্ষা করে ভারতে ঢুকে পড়ে। অনেক সময় চোরাকারবারীরা হামলাও করে। তখন বাধ্য হয়ে গুলি চালানো হয়।
বরাবরের মতোই ওই বৈঠকে সীমান্তহত্যা, নির্যাতন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএসএফ। একই সঙ্গে মাদকদ্রব্য পাচার প্রতিরোধ এবং অবৈধ সীমান্ত পারাপার বন্ধে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে সীমান্ত সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে। এছাড়া, অবৈধভাবে গবাদি পশুর প্রবেশ রোধ, অবৈধ অস্ত্র, গোলা-বারুদ, বিস্ফোরক পাচার প্রতিরোধ, নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ, অবৈধ সীমান্ত পারাপার বন্ধ, সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সমন্বিত টহলসহ সীমান্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
বৈঠকে সীমান্তে বিরাজমান শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখাতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। এছাড়া, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তির আলোকে উদ্ভূত যেকোনো সমস্যায় ব্যাটালিয়ন অথবা কোম্পানি অথবা বিওপি কমান্ডার পর্যায়ে যোগাযোগ ও পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানে সম্মত হয় দুই পক্ষ।