চসিকে চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নগরীর ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৭টি ওয়ার্ডেই যেমন একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে, ঠিক তেমনি ১৪টি সংরক্ষিত কাউন্সিলরের মধ্যে ১২টিতে বিদ্রোহ হয়েছে। এমনকি মনোনয়ন থেকে বাদ পড়া ২১ জন বর্তমান কাউন্সিলরের মধ্যে ১৭ জনই মনোনয়ন জমা দিয়েছে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে। তবে বিদ্রোহীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে হুশিয়ারি দিয়েছে দলের হাইকমান্ড।
শেষ পর্যন্ত কোনো হুমকি-ধমকি’ই কাজে আসলো না। আশঙ্কা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৪টি ওয়ার্ডে রয়েছে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। আর বাকি ৩৭টি ওয়ার্ডে মূল প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে নির্বাচন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে এক থেকে চার জন পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থী। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচন যুদ্ধে নামা নিয়ে যুক্তির কোনো শেষ নেই।
নগরীর ১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর এফ কবির মানিক বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী বলে কোনো শব্দ নেই। এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এখানে শুধুমাত্র মেয়র প্রার্থী দলীয় প্রতীক পেয়েছে। কাউন্সিলররা ব্যক্তিগত প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। তাই আমি মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচন করবো। আর নির্বাচন করার জন্যই মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছি।
নগরীর ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, ‘আমার এলাকার কাউন্সিলর আগেও তিনবার দলের হয়ে নির্বাচন করেছেন। এখন তো আমাদের মতো তরুণদের সুযোগ দেয়া উচিত। আমার এলাকার দল-মত নির্বিশেষে আমাকে অনুরোধ জানিয়েছে। তাই নির্বাচন যুদ্ধে নামলাম।’
একেতো ওয়ার্ডগুলোতে রয়েছে কোন্দলহীন বিএনপির প্রার্থী। তার সাথে বিদ্রোহী প্রার্থী যুক্ত হওয়ায় কিছুটা বেকায়দায় পড়তে হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। এর মধ্যে দলীয় সমর্থন না পাওয়া ১২ জন পুরুষ এবং ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। অথচ বিদ্রোহ ঠেকাতে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাড়ে চারশ নেতা-কর্মীকে গণভবনে ঢেকে নিয়ে গিয়েছিল দলীয় হাইকমান্ড।
লালখান বাজার ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আবুল হাসনাত বেলাল। এক সময় যার সাথে এফ কবির মানিকের সুসম্পর্ক থাকলেও এখন তা নেই। আর এর কারণ হলো নির্বাচন। এফ কবির মানিকের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া নিয়ে বেলাল বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সবাই দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ বড় দল। সবাইকে তো আর মনোনয়ন দিতে পারে না। আমাকে দিয়েছে, আমি নির্বাচন করছি। আশা করছি সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।’
একইভাবে ২০নং দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী বলেন, ‘আমি যদি মনোনয়ন না পেতাম তাহলে কিন্তু বিদ্রোহ করতাম না। আমি নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সাংগঠনিক দক্ষতার পাশাপাশি এলাকার উন্নয়ন করেছি বলেই আমাকে মনোনীত করা হয়েছে। তবে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে হয়তো আমাদের একটু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। আমি জেতার জন্য প্রস্তুতি নিয়েই নেমেছি।’
বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাও কিছুটা বিব্রত অবস্থায় রয়েছেন। যে কারণে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের জন্য তাদের একাধিকবার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিতদের অধিকাংশই বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসাবে পরিচিত। আর যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। আর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করা না হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রথমে শোকজ এবং পরবর্তীতে দল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল।
তিনি বলেন, ‘সবাইকে দলীয় সিদ্ধান্ত নেমে চলা উচিত। গত বর্ধিত সভায় নির্বচনের প্রধান সমন্বয়কারী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সবাইকে দলের প্রতি আনুগত্য থাকতে বলেছেন। এখনো সময় আছে বিদ্রোহী যারা আছে তারা মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেয়ার। আজকে যারা বাদ পড়েছে তারা আগামীতে মূল্যায়ন হবে। তবে দলের বিরুদ্ধে গেলেই কঠোর শাস্তি।’
নির্বাচন কমিশনের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ২৯ মার্চের এই নির্বাচনের জন্য মেয়র পদে ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২২০ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৮ জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। আর ৮ই মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ভোটার রয়েছে ১৯ লাখ ১৭ হাজার।