১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
ঈদের বাজারে লাফিয়ে বেড়ে এবার কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ইদের আগের দিন ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কেজিতে কমেছে ৪০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, একে তো করোনার প্রভাব, তার ওপর ঈদের ছুটির আমেজ কাটেনি। সব মিলিয়ে বাজারে ক্রেতা কম। এরই মধ্যে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। ঢাকার মসলাজাতীয় পণ্যের পাইকারি বাজার শ্যামবাজার ও মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। খুচরায় দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা। এ দাম ঈদের আগের তুলনায় ৫ টাকা কম।
ঈদের আগে ঢাকার বাজারে ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজির দর ১৯০ টাকায় উঠেছিল। এখন তা কমে ১৫০ টাকায় নেমেছে। এ ছাড়া কক মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ ও দেশি মুরগি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। আর খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। তবে বেড়েছে ডিমের দাম। ঈদের আগে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন (১২টি) ছিল ৮০ টাকার আশপাশে। এখন তা বেড়ে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় উঠেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, রোজা শেষে ডিমের চাহিদা একটু বাড়তি। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে আলু ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোলার কেজি নেমেছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়, যা আগের চেয়ে ৫ টাকা কম। বিক্রেতাদের দাবি, এবার রমজানে ছোলা বিক্রি কম হয়েছে। এখন চাহিদা কম।
এদিকে বাজারে স্বাভাবিক দামেই বিক্রি হচ্ছে শাকসবজি। সাধারণত ঈদের পর রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকলেও এবার সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে না। ঈদের পর ৪ দিন কেটে গেলেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। অধিকাংশ বাজারে বেশির ভাগ সবজির কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর সাধারণত সবজির চাহিদা বেড়ে যায়। এতে দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এবার সবজির চাহিদা আগের মতো বাড়েনি। করোনা ভাইরাসের কারণে এবার ঈদের আমেজ কারো মধ্যে ছিল না। যে কারণে এবার রাজধানীর বেশিরভাগ মানুষের ঈদের দিন সাধারণ দিনের মতোই কেটেছে।
তারা বলেন, ৩১ মে থেকে অফিস খুলছে। সেই সঙ্গে গণপরিবহন চলাচলের কথা বলা হয়েছে। কাজেই ৩১ মের পর থেকে রাজধানীতে মানুষের চলাচল বাড়বে। আবার যারা ঢাকার বাইরে গ্রামের বাড়িতে রয়েছে তারাও ফিরে আসবে। ফলে সবজিসহ সব ধরনের পণ্যের চাহিদা বাড়বে। এতে তখন দামও কিছুটা বাড়বে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের আগের মতো এখনও বাজারে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর। রোজার শুরুর দিকে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজর ঈদের আগে দাম বেড়ে ১০০ টাকা হয়। এখন বাজার ও মানভেদে গাজরের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গাজরের এই দামের বিষয়ে শেওড়াপাড়ার ব্যবসায়ী আলম বলেন, গাজরের মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। এখন খুবই সীমিত পরিমাণে গাজর পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে গাজরের দাম বেড়েছে। নতুন গাজর না ওঠা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে রোজার শুরুর দিকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসার দাম ঈদের আগে ২০ থেকে ২৫ টাকায় নেমে আসে। এখনও শসার কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে রোজার শুরু থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম কমে ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে চলে এসেছে।
এছাড়া পাকা টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, চিচিংগা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, ঝিঙা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগেও সবজিগুলোর দাম এমনই ছিল।
সবজির দাম বাড়ার বিষয়ে শেওড়াপাড়ার ব্যবসায়ী রহমান বলেন, সাধারণত ঈদের পর সবজির দাম কিছুটা বাড়ে। কিন্তু এবার কোন সবজির দাম বাড়েনি। আসলে এবার যে ঈদ হয়েছে তা খুব একটা বোঝা যায়নি। করোনা ভাইরাসের কারণে এবারের ঈদ বেশিরভাগ মানুষেরই সাধারণ দিনের মতো কেটেছে। সে কারণে ঈদের আগে বাজার যেমন ছিল এখনও বাজার তেমনি রয়েছে।
এদিকে মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতোই রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ৫০০ টাকা। নলা (ছোট রুই) মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা, পাঙাশ ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শোল মাছ ৪০০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।