কয়েক দফা দাম কমে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ২৫ টাকায় নেমেছে।
কয়েক দফা দাম কমে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ২৫ টাকায় নেমেছে। তবে কিছুটা বেড়ে ফের ৫০ টাকা কেজি ছুঁয়েছে দেশি পেঁয়াজ।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘রোজার ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম কয়েক দফা বাড়ে। কিন্তু ঈদের পর থেকেই পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করে। তবে গত দু’দিনে দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়লেও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে।’
শনিবার (১৩ জুন) বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, যা বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, যা বৃহস্পতিবার ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কমার বিষয়টি উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও।
টিসিবি জানিয়েছে, এক সপ্তাহে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ কমে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি পেঁয়াজের কেজি আগের মতোই ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত রফতানি বন্ধ করলে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর সরকারের নানামুখী তৎপরতায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও তা আর ১০০ টাকার নিচে নামেনি।
তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত। ভারত রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর দেশের বাজারে দফায় দফায় কমতে থাকে পেঁয়াজের দাম। কয়েক দফা দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় নেমে আসে।
কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে আবার বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। ৪০ টাকার পেঁয়াজ এক লাফে ৮০ টাকায় উঠে যায়। এ পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে ভোক্তা অধিদফতর ও র্যা ব।
পেঁয়াজের বাজারে চলে একের পর এক অভিযান। এতে আবারও দফায় দফায় দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকায় নেমে আসে।
তবে রোজার আগে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। কয়েক দফা দাম বেড়ে রোজার শুরুতে পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকায় পৌঁছে যায়। এরপর রোজার মাঝামাঝি সময়ে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে ৪৫ টাকায় নেমে আসে।
এ পরিস্থিতিতে ঈদের আগে আবার দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হয় পেঁয়াজের কেজি। তবে ঈদের পর দাম কমে পেঁয়াজের কেজি আবার ৪০ টাকায় নেমে আসে।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ঈদের পর থেকেই বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এতে দামও কমেছে। গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আজ ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’
এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কমলেও দেশি পেঁয়াজের দাম গত দু’দিনে কিছুটা বেড়েছে। ঈদের পর বেশ কিছু দিন দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা বিক্রি হয়। এখন তা দাম বেড়ে মানভেদে ৪৫ ও ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’
যাত্রাবাড়ীতে আমদানি করা পেঁয়াজ ২৫ টাকা কেজি বিক্রি করা মিলন বলেন, ‘পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে।
সেই সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও বেশ ভালো। কিন্তু বাজারে দেশি পেঁয়াজের চাহিদার তুলনায় ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা অনেক কম। এ কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমলেও গত দু’দিনে দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে আমাদের ধারণা, শিগগির দেশি পেঁয়াজের দামও কমবে।
কারণ বাজারে এখন দেশি বা আমদানি করা পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ২৫ টাকা দিয়ে কিনতে পারলে অনেকেই ৪৫ টাকা দিয়ে দেশি পেঁয়াজ কিনতে চাইবেন না।
ফলে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা কিছুটা কমতে পারে। তবে হুট করে ক্রেতাদের মধ্যে পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়লে বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে।’
রামপুরার ব্যবসায়ী খায়রুল বলেন, ‘বাজেটে দেশি পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কর ছাড় দেয়া হয়েছে এবং আমদানি করা পেঁয়াজে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে বলে নিউজ দেখেছি।
আমাদের ধারণা ছিল- এতে দেশি পেঁয়াজের দাম কমবে এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়বে। কিন্তু বাজারে তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ার বদলে উল্টো আরও কমেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানি করা পেঁয়াজের থেকে দেশি পেঁয়াজ অনেক বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায়। এ জন্য হয়তো বড় ব্যবসায়ীরা আস্তে আস্তে দেশি পেঁয়াজ মজুত করে ফেলছেন।
আর সম্প্রতি ভারত থেকে যেসব পেঁয়াজ এসেছে তা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছেন। এ কারণেই হয়তো দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কমেছে।’