ফেসবুকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে বিজ্ঞাপনদাতারা
ঘৃণ্য বক্তব্য, বর্ণবাদ এবং ভুয়া খবর প্রচারের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ফেসবুক বয়কটের ডাক দিয়েছে বিজ্ঞাপন দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। শুরু হয়েছে ‘#স্টপহেটফরপ্রফিট’ আন্দোলন। ফেসবুক থেকে বিজ্ঞাপন বর্জনের তালিকায় নাম লিখিয়েছে ইউনিলিভার।
শুক্রবার কোকাকোলার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় যে তারা অন্তত ৩০ দিন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেবে না। ফেসবুকে বর্ণবাদী কনটেন্ট নিয়ে বর্তমান অবস্থান ঘিরে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্বে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও এর জায়গা নেই। সামাজিক যোগাযোগের কোম্পানিগুলোকে আরও বেশি দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ হতে হবে বলেন কোকা–কোলার প্রধান নির্বাহী জেমস কুয়েন্সি।
কোকাকোলা ছাড়াও ইউনিলিভার তাদের বেশ কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপন ফেসবুকে বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়েছে। এ বছরে তারা ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন না করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্যদিকে কয়দিন আগেই ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ফেসবুক এমন অভিযোগে ফেসবুকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ভাইবার। তারা বলেছে, ভাইবার অ্যাপ থেকে ফেসবুক কানেক্ট, ফেসবুক এসডিকে এবং গিফি সরিয়ে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি ফেসবুক নেটওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মে সব ধরনের বিজ্ঞাপন স্থগিত করবে ভাইবার।
ভাইবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা ফেসবুক বয়কট করার জন্য আন্দোলনও করবে। এ ক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক আন্দোলনের পর গঠিত অ্যান্টিডিফেমেশন লিগ, এনএএসিপিসহ ছয়টি সংস্থার সঙ্গে কাজ করবে।
তথ্য অব্যবস্থাপনার বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিতে ৮ কোটি ৭০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়। সর্বশেষ ফেসবুক থেকে ঘৃণিত বক্তব্য ছড়ানোর বিষয়টি ভাইবারের নজরে আসায় তারা #স্টপহেটফরপ্রফিট আন্দোলন জোরদার ও ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে ফেসবুক বলছে ক্ষতিকর পোস্টে তারা বিশেষ লেবেল বা বার্তা যুক্ত করে দেবে। এমটি টুইটার করে থাকে বর্তমানে।
ইউনিলিভার ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ফোন কোম্পানি ভেরিজন ফেসবুক ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ৯০ টির বেশি প্রতিষ্ঠান ফেসবুকে বিজ্ঞাপন বর্জনের তালিকায় যুক্ত হলো।
অন্যদিকে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ঘৃণ্য বক্তব্য সরিয়ে দেওয়ার রেকর্ড তুলে ধরেছেন। তিনি এ মাসে ইউরোপিয়ান কমিশনের একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন, যাতে বলা হয়েছে যে গত বছর ফেসবুক ৮৬ শতাংশ ঘৃণ্য বক্তব্য সরিয়েছে, যা আগে ছিল ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ। তিনি ফেসবুক থেকে বর্ণবাদী বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ না রাখা ও নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে—এমন রাজনৈতিক বক্তব্য সরিয়ে ফেলারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে এর আগে এমন অনেক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগে করে বর্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদকারীদের নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় নানা চাপে ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এই চাপের মুখে নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ।
মিথ্যা তথ্য সম্বলিত ট্রাম্পের একটি পোস্ট গণ-অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় টুইটার কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের সরিয়ে দেয়। তবে ফেসবুক ট্রাম্পের ওই পোস্টের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সে সময় জাকারবার্গ ট্রাম্পের ওই পোস্ট অপসারণ না করার কথা বলেন। তার এমন বক্তব্যে হতাশ হন স্বয়ং তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। ক্ষোভ জানিয়ে অনেক কর্মী কর্মবিরতি পালন করেন।
এসব বিতর্কে ও বর্জনের প্রভাব পড়ছে ফেসবুক ও টুইটারের শেয়ারের দামে। আশঙ্কাজনকহারে কমতে দেখা গেছে গত এক সপ্তাহ যাবত।