২০৩৬ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন!
২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা পোক্ত করলো ভ্লাদিমির পুতিন। রুশ সংবিধান সংশোধন প্রশ্নে গণভোটে দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিনের পক্ষেই রায় দিয়েছে দেশটির সিংহভাগ ভোটার। প্রাপ্ত আংশিক ফলাফলে দেখা গেছে, বিপুল ব্যবধানে জিতেছে সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব। ফলে আগামী ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে আর বাধা রইল না পুতিনের।
রাশিয়ার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে ৭৭ শতাংশের বেশি ভোট সংবিধান সংশোধনের পক্ষে গেছে। বুধবার (১ জুলাই) ছিল গণভোটের শেষ দিন।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব জেতার সব আয়োজন শেষ করার পরই গণভোট আহ্বান করেছিলেন পুতিন।
টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে সংবিধান পরিবর্তনের লক্ষ্যে গণভোট অনুষ্ঠিত হয় রাশিয়ায়।
দুই দশক ধরে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় থেকে রাশিয়াকে নেতৃত্ব দেয়া সাবেক কেজিবি প্রধান পুতিন আরও ১৬ বছর দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে থাকার বাধা কাটল এই গণভোটে। এটিকে পুতিনের আজীবন ক্ষমতায় থাকার বাসনা পূরণ বলে সমালোচনা করছেন তার সমালোচকরা।
পুতিনের বয়স বর্তমানে ৬৭। ২০৩৬ সালে বয়স হবে ৮৩ বছর।
রুশ নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, যতো ভোট গণনা হয়েছে তার মধ্যে ৭০ শতাংশই সংবিধান পরিবর্তনে সায় দিয়েছে। তবে ২৯ ভাগ রায় দিয়েছে বিপক্ষে।
ভোট দিতে রাশিয়ানদের বিভিন্ন পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এর মাঝেও গণভোটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয় দেশটিতে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভোট দিতে দেখা যায়। এ সময় তিনি মাস্ক না পরায় বিতর্ক দেখা দেয়। প্রশ্ন উঠে, কেন তিনি জনসম্মুখে মাস্ক পরেন না। তার মাস্ক পরাকে অনেকে পৌরুষত্বের দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন।
রাশিয়ার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী রাষ্ট্রনায়ক ভ্লাদিমির পুতিন এ নিয়ে চার মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম দুই মেয়াদে ৮ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ২০১২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংবিধান সংশোধন করে পার্লামেন্টের মেয়াদ ৬ বছর করেন। ২০২৪ সালে তার চতুর্থ দফার মেয়াদ শেষ হবে।
মাঝে যে ৪ বছর তিনি প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন না, সে সময়ও তিনি ছিলেন ক্ষমতার খুব কাছাকাছি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে বিশ্বস্ত ও অনুগত একজনকে প্রেসিডেন্ট করে নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ৪ বছর। পরে আবারও প্রেসিডেন্ট পদে লড়ে ক্ষমতায় আসেন। দীর্ঘ এই শাসনকালে সাবেক কেজিবিপ্রধান নিজেকে রাশিয়ার একজন শক্তিশালী শাসকে পরিণত করেছেন। এতেও ক্ষান্ত হননি তিনি।
আরও ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা তার। এ কারণেই এই গণভোট।
রাশিয়ার বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, এক ব্যক্তি একটানা দুবারের বেশি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০০০ সাল থেকে দুই মেয়াদে চার বছর করে মোট আট বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এর পর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পালন করতে তিনি নিজের অনুগত রাজনীতিবিদ দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করে নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ২০১২ সালে মেদভেদেভের মেয়াদ শেষ হলে পুতিন আবার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসেন।
ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘ করতে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ ৪ বছরের জায়গায় ৬ বছর করেন পুতিন। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষ হবে ভ্লাদিমির পুতিনের।গণভোটে জয়ী হওয়ার ফলে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত নিশ্চিন্তে ক্ষমতায় থাকতে পারছেন সাবেক কেজিবি প্রধান।