পল্লবী থানায় বিস্ফোরণে পুলিশ ফাঁদেই ধরা পড়ল পুলিশ
প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপকে ফাঁসাতে অর্থের বিনিময়ে বোমা ঢোকানো হয় পল্লবী থানার ভেতর। অসাবধানতায় বিস্ফোরিত হয় সেই বোমা। এরপরই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। এ ঘটনায় সম্প্রতি মিরপুর বিভাগের ৬ শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলিও করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় যাদের আটক করা হয়েছে তাদের স্বজনদের দাবি, বিস্ফোরণ ঘটনার দু’দিন আগেই তাদের স্বজনদের বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়।
আটককৃতদের একজন রফিকুল ইসলাম। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুরে মিরপুর ১২ নম্বরের বাসায় রফিকুলের স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
তারা জানান, রফিকুল ইট ও বালুর ঠিকাদারি কাজ করেন। ২৯ জুলাই থানায় বিস্ফোরণের দুদিন আগে ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় তাদের বাসার সামনে কালো মাইক্রোবাসে সাদা পোশাকে ৫ অস্ত্রধারী ব্যক্তি আসেন। এ সময় তারা ঘরে ঢুকে রফিকুলের মুখ চেপে ধরে অস্ত্রের মুখে গাড়িতে তুলে নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
ঘটনার পরপরই পল্লবী থানায় যান রফিকুলের স্ত্রী শিল্পী আক্তার ও রফিকুলের বোন। কিন্তু এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের সঙ্গে কথাও বলেননি, সহযোগিতাও করেননি। উল্টো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ করেন রফিকুলের স্ত্রী। জিডি করতে গেলেও ফিরে আসতে বাধ্য হয় রফিকুলের পরিবার। তবে রফিকুল প্রায় দেড় যুগ আগে একটি হত্যা মামলার আসামি। সেই মামলায় তিনি জামিনে আছেন।
২৭ তারিখে তাদের ধরে নেবার পর ২৯ তারিখে ঘটে বিস্ফোরণের ঘটনা। সূত্র বলছে, পল্লবী এলাকার যুবলীগ নেতা জুয়েল রানা ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল তাইজুল ইসলাম বাপ্পীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল। আটক রফিকুল, শহিদুল ও মোশারফ- রানা গ্রুপের সদস্য। রানাকে শায়েস্তা করতেই ওয়ার্ড কাউন্সিলের পরামর্শে থানার কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য এই বোমা নাটকের ফাঁদ পাতে। এ জন্য আড়াই কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে জানতে মঙ্গলবার দিনভর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাপ্পীর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পরিকল্পনামাফিক বাপ্পীর থেকে নেয়া এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক আটক দেখিয়ে তিনজনকে আদালতে পাঠানোর কথা ছিল। শুরুতে শুধু অস্ত্র ও বোমাসদৃশ্য বস্তু দেখিয়ে জব্দ তালিকা তৈরি করা হয়। বোমাসদৃশ্য বস্তু পরীক্ষার জন্য ডাকা হয় বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে। বিশেষজ্ঞদল এর ভেতর বালু দেখতে পেয়ে ফিরে আসেন। পরে মামলাকে জোরালো করতে আবারও আসল আইইডি ঢোকানো হয়। কিন্তু অদক্ষ হাতে নাড়াচাড়ার সময় এই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। আহত হন ৪ পুলিশ সদস্যসহ ৫ জন। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন ডিএমডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু এ সময় ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যরা তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একেকজন একেকরকম তথ্য দিতে থাকেন।
সন্দেহ হলে জঙ্গি প্রতিরোধে গঠিত কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) মনির হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।
সিটিটিসির উপ-কমিশনার আব্দুল মান্নান সময় সংবাদকে বলেন, মামলাটির তদন্ত এখনো চলছে। এর সঙ্গে আরো বেশ কিছু ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে পারলে পুরো ঘটনা আরো পরিষ্কার হবে।
তবে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপ কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন বলেন, পুলিশের যে ৬ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে তার মানে এই নয় যে তারাও এই ঘটনায় জড়িত। তবে এমন বিস্ফোরক উদ্ধারের পর যে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল, তারা হয়তো তা যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি। সে কারণেও বদলির সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়ে থাকতে পারে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা পল্লবী থানার সদস্য। এর আগে পল্লবী থানা পুলিশ জানিয়েছিল গত ২৯ জুলাই তিন ব্যক্তিকে আটক করার পর পল্লবী থানায় নেওয়া হয়। এরপর ঘটে বিস্ফোরণের ঘটনা। আসামি ৩ জন এখনো রিমান্ডে আছেন।