‘যুদ্ধজাহাজ তৈরি করবে বাংলাদেশ’
আগামীতে বাংলাদেশ যুদ্ধজাহাজ তৈরির পরিকল্পনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যুদ্ধ নয়, শান্তিতে বিশ্বাস করে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিটি বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার পর খুলনা শিপইয়ার্ড নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিই। আমাদের ডকইয়ার্ড চট্টগ্রামে এবং নারায়ণগঞ্জে, সেটাও আমরা নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিই। লক্ষ্য হলো নিজস্ব শিপইয়ার্ডে আমরা আমাদের যুদ্ধ জাহাজও তৈরি করবো। যার কাজ ইতোমধ্যে আমরা কিছু কিছু শুরুও করেছি। তাছাড়া কক্সবাজারের পেকুয়াতে আমরা সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করছি।
অনুষ্ঠানে মিডশীপম্যান ২০১৮/এ ব্যাচ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার (ডিইও) ২০২০/বি ব্যাচের নবীন কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শেষ হয়। সমাপনী এই আয়োজনে এ বছর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৩১ জন মিডশীপম্যান এবং ৩২ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ ৬৩ নবীন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন। এদের মধ্যে ৩ জন মহিলা মিডশীপম্যান এবং ৬ জন মহিলা ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার রয়েছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানান নবীন কর্মকর্তারা। সামরিক রীতি অনুযায়ী নবীন এই ৬৩ কর্মকর্তা একসঙ্গে শপথ পাঠ করেন দেশসেবার। এরপর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল সমাপনী ব্যাচের সেরা প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে পদক ও সোর্ড অব অনার তুলে দেন।
এ বছর ডিইও/২০২০-বি ব্যাচ থেকে শ্রেষ্ঠ ফল অর্জনকারী অ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট ফরিদুর রহমান খান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক, মিডশীপম্যান হামিদ হোসেন আদনান নৌ প্রধান স্বর্ণপদক এবং সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী মেহরাব হোসেন অমি সোর্ড অব অনার প্রাপ্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, এই ভূখণ্ডে নৌবাহিনীর হেড কোয়ার্টার স্থাপনে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির পিতা। স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে ভারত ও যুগোস্লাভিয়া থেকে জাহাজ নিয়ে জাতির পিতা নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু করেছিলেন বলেও জানান শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুই সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে প্রথমবারের মতো প্রতিরক্ষা নীতিমালা গঠন করলেও ১৫ আগস্টের পর স্বাধীনতার চেতনা থেকে দেশ দূরে সরে যায় বলে আক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নৌবাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আওতায় সমুদ্রে বিজয় এনেছে বাংলাদেশ। তিনি জানান, অথচ প্রথমবারের মতো ১৯৭৪ সালে সমুদ্র সীমা আইন জাতির পিতা প্রণয়ন করে গেলেও অতীতের সরকারগুলো কেউই সমুদ্র সীমা উদ্ধারের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয় নি।’
২৭টি যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনের সংযোজনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌবাহিনী এখন ত্রিমাত্রিক একটি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তিনি জানান, ‘সবার সাথেই বন্ধুত্ব কিন্তু শত্রুতা নয় কারো সাথে’_এই নীতিতেই চলছে বাংলাদেশ। তারপরও, বাংলাদেশ শান্তি চায়, যুদ্ধ নয় ! কিন্তু স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে সরকার প্রতিটি বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে চলমান মহামারী প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো এর মধ্যে করোনা এসে যোগাযোগ, চলাচল অর্থনীতি সবকিছুর মধ্যে একটা স্থবিরতা নিয়ে এসেছে। দেশের মানুষের সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে ভার্চুয়াল পরিসরে সীমিত আয়োজন করা হচ্ছে।’ ২০২০ এর শেষে নতুন বছরে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হবে দেশে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বছর মুবিবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব একসাথে সীমিত ভাবে সাবধানতা মেনে উদযাপন করা হবে’।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকের নবীন কর্মকর্তারাই ২০৪১ এ নেতৃত্ব দেবেন, অগ্রগতির সৈনিক হতে হবে আপনাদের’। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও প্রতিকূল বাস্তবতায় দীর্ঘমেয়াদি এই প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়ায় নেভাল একাডেমিসহ বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান সরকার প্রধান।