করোনারঘাত ভয়াবহ সংকটে ইউরোপ, থামছে না তাণ্ডব!
ইউরোপে করোনারঘাত শুরু হয়েছিল ইতালি দিয়ে, যা এখন গোটা অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালাচ্ছে। ভয়াবহ সংকটে ফেলেছে দেশগুলোকে। কয়েকটি দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হলেও সুখবর মিলছে না। ফলে দীর্ঘ হয়েই চলেছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল। গত একদিনেও যার শিকার আড়াই লাখ মানুষ, প্রাণ ঝরেছে প্রায় ৬ হাজার ভুক্তভোগীর।
বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডমিটারের নিয়মিত পরিসংখ্যানের তথ্যমতে, ইউরোপে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা হানা দিয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৪৯ জনের শরীরে।
এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৭১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে প্রাণহানি ঘটেছে ৫ হাজার ৭২১ জনের। এ নিয়ে মৃত্যুর মিছিল বেড়ে ৬ লাখ ১৮ হাজার ৯৪৯ জনে ঠেকেছে। যদিও সুস্থতা লাভ করেছেন ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯০ হাজার রোগী।
ইউরোপীয় অঞ্চলের প্রায় সবগুলো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এর মধ্যে সবচেয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, পোলান্ড, ইউক্রেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামের মতো দেশগুলোতে।
এর মধ্যে চরম সংকটে রাশিয়া। গত বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি দেশটিতে করোনা হানা দেয়। শুরুতে ততটা ভয়াবহতা না দেখা গেলেও একই বছরের শেষের দিক থেকে এখন পর্যন্ত উপর্যুপুরী আঘাত হেনেই চলেছে ভাইরাসটি।
যেখানে এখন পর্যন্ত ৩৫ লাখ ২০ হাজার ৫৩১ জনের শরীরে হানা দিয়েছে করোনা। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।
নতুন করে প্রাণহানি ঘটেছে ৫৫৫ জনের। ফলে মৃতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৪৯৫ জনে ঠেকেছে। সুস্থতা বাড়লেও তা সংক্রমণের তুলনায় কম। করোনা রুখতে নিজ দেশের টিকা প্রয়োগ শুরু করেছে দেশটি। যদিও এখনও তেমন সুখবর মিলেনি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বর্তমানে যুকরাষ্ট্রের পরই শোচনীয় অবস্থায় এ অঞ্চলের আরেক দেশ ব্রিটেন। কঠোর লকডাউন জারি রয়েছে দেশটিতে। তারপরও থামছে না ভাইরাসটি দাপট।
তাই, এবার ব্রিটেন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি। এখন পর্যন্ত সেখানে করোনা হানা দিয়েছে ৩৩ লাখ ১৬ হাজার মানুষের দেহে। এর মধ্যে প্রাণ ঝরেছে ৮৭ হাজার ২৯৫ জনের।
অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করায় নতুন করে ধুকছে ফ্রান্স। যা এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত ভুক্তভোগী।
এমতাবস্থায় মহামারি থামাতে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করেছে দেশটির সরকার। যা আজ শনিবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হচ্ছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল পর্যন্ত জারি করা এই কারফিউ চলবে টানা ১৫ দিন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ। প্রাণহানি ঘটেছে ৬৯ হাজার ৯৪৯ জনের।
একই অবস্থায় ইতালিও। যেখানে কোনভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না করোনার গতি-প্রকৃতি। আগের তুলনায় সুস্থতার বাড়লে থামানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৫২ হাজারের বেশি মানুষ করোনার কবলে পড়েছেন। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৮১ হাজার ৩২৫ জন।
আশার খবর নেই পার্শ্ববর্তী দেশ স্পেনেও। আক্রান্ত ও মৃতু হলেও বেশ কয়েকদিন ধরেই সুস্থতা শূন্য দেশটি। যেখানে আজ শনিবার পর্যন্ত ২২ লাখ ৫২ হাজারের অধিক মানুষের দেহে হানা দিয়েছে ভাইরাসটি। প্রাণ ঝরেছে ৫৩ হাজার ৩১৪ জনের।
আশঙ্কার খবর ইউরোপের প্রাণকেন্দ্র জার্মানিও নতুন করে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। নতুন বছরের শুরু থেকে দেশটি করোনার যেন লাগাম ছাড়া। প্রতিদিনই হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ হারাচ্ছেন সেখানে। গত একদিনেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।
এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ২৪ হাজার জার্মান করোনার শিকার হয়েছেন। এর প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার সুস্থতা লাভ করলেও প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ৪৬ হাজার।
দেশটিতে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়েছে। তারপরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনা পরিস্থিতি। এমতাবস্থায় ভ্রমণে কঠোর বিধি আরোপ করেছেন জার্মান চ্যাঞ্জেলর।
এছাড়া পোলান্ডে আক্রান্ত ১১ লাখ ৪৭ হাজার মানুষ, মৃত্যু হয়েছে ৩২ হাজার ৮৪৪ জনের। নেদারল্যান্ডসে করোনার হানা দিয়েছে ৯ লাখ ২ হাজার মানুষের দেহে, প্রাণহানি ঘটেছে ১২ হাজার ৮৬৮ জন ভুক্তভোগীর। বেলজিয়ামে সংক্রমিত ৬ লাখ ৭৩ হাজার, মৃত্যু ২০ হাজার ২৯৪ জনের।