অর্থপাচার তদারকিতে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নাম চেয়েছেন হাইকোর্ট
গত ১২ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে অর্থপাচার রোধ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তদারক-নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। তাদের নাম, পদবী, ঠিকানাসহ বিস্তারিত জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত অর্থপাচার রোধে সংশ্লিষ্ট বিভাগের এসব কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা আছে কিনা, ব্যর্থ হয়ে থাকলে কেন হলেন, অর্থপাচারের বিয়টি তারা টের পেয়েছিলেন কিনা, পেয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন কিনা, অর্থপাচারের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ আছে কিনা তাও জানাতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। এছাড়া পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন, পি কে হালদারের আত্মীয় পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক অমিতাভ অধিকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক এবং পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক মো. আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান।
এদিকে দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গত ৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন সাবেক সচিব ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান এন আই খান। তার ক্ষেত্রে দেওয়া আদেশ স্থগিত চাওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট ওইদিন পিক হালদারের মা, স্ত্রী, এন আই খানসহ ২৫ জনের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।
‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শিরোনামে গত ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত। এ আদেশে দুদক গত ২ ডিসেম্বর আদালতকে জানায়, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে ইন্টারপোল পিকে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এর আগে হাইকোর্ট গতবছর ২১ অক্টোবর এক আদেশে দেশের বিমানবন্দরে পা রাখা মাত্রই পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দেন। এরইমধ্যে হাইকোর্ট দু’দফায় পিকে হালদার, তার মা, স্ত্রীসহ সংশ্লিস্ট ব্যক্তিদের পাসপোর্ট জব্দ, দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা, তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া পিকে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে।
বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার, পি কে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালসহ ৮৩ ব্যক্তি দুই হাজার ৪শ ৬৭ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে দেশের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।