জিয়ার খেতাব বাতিল হলে কী করতে পারে বিএনপি?
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সুপারিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা এবং প্রয়োজনে আইনগতভাবে এর মোকাবেলা করতে চায় বিএনপি।
দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন এবং এই সময়ে খেতাব বাতিলের পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের এখতিয়ার নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন।
বিএনপি মনে করে, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জনগণের দৃষ্টি সরাতে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের ইস্যুটি সামনে এনেছে।
দলের নেতাকর্মীরা বলছেন এটি কোনোভাবেই হতে দেয়া হবে না। সরকার পতনের আন্দোলনের সঙ্গেই এ ইস্যুতে তারা রাজপথে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন।
খেতাব বাতিলের সুপারিশ আসার পর প্রতিবাদ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি মনোনীত পরাজিত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, "সবরকম কর্মসূচি দিয়েই আমরা এর প্রতিবাদ করে যাবো। গণতান্ত্রিক পন্থায় সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, প্রতিবাদ, মানববন্ধনসহ যত ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি আমাদের সংবিধান অনুযায়ী এবং সারা বিশ্বে যেগুলো প্র্যাকটিস হয়ে থাকে আমরা সেগুলোই করবো। আমার বিশ্বাস এর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেই আমাদের সকল সমস্যার সমাধান হবে।"
ইশরাক হোসেন আরো বলেন, "একই সাথে এই খেতাবের বিষয়টিকেও আমাদের সার্বিক যে আন্দোলন সেটির অন্তর্ভুক্ত করে আমরা সফল হব আন্দোলনে এবং জিয়াউর রহমানের খেতাব যেখানে আছে সেখানেই থাকবে।"
বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার এ বিষয়ে কতটা কী করবে তার ওপরেই বিএনপির কর্মসূচি নির্ভর করবে। সরকার যতদূর এটাকে নিয়ে যাবে তার ওপরই দলীয় পদক্ষেপ নির্ভর করবে। আমাদের মধ্যে বিষয়টিকে নিয়ে নানাভাবে আলোচনা হচ্ছে। একটা বিষয়কে নানান দিক থেকে দেখা যায়। নানান দিক থেকে প্রতিবাদ আসতে পারে। এমনও হতে পারে যে একই সাথে আমরা আইনগত প্রক্রিয়া এবং রাজপথের আন্দোলন দুটোই চালিয়ে যাব।
রুমিন বলেন, 'তবে এটা অবশ্যই নির্ভর করে যে সরকার নেক্সট পদক্ষেপটা কী নিচ্ছে। তবে অবস্থাদৃষ্টে আমরা যেটা দেখি সেটা হচ্ছে যে একটার পর একটা ইস্যু আসে আর সেটাকে চাপা দিতে আরেকটা ইস্যু নিয়ে আসে।'
রুমিন ফারহানা বলছেন আগামী অধিবেশনে সংসদে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক এবং আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে জনমত গড়তে চান তারা। তিনি বলেন, 'আমরা বিষয়টি পার্লামেন্টে তুলবো। আমরা কী বলবো এবং কীভাবে আমরা বিষয়টি তুলবো সেটা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। আমাদের পরবর্তী অধিবেশন সম্ভবত মার্চে হবে। আমরা সেখানে বিষয়টি অবশ্যই তুলবো।'
এদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে দলীয় হাইকমান্ড জিয়ার খেতাব বাতিলের ইস্যুটি পর্যবেক্ষণ করছে বলেই মনে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের কথায় মনে হচ্ছে কিছুটা বুঝে শুনেই এ ব্যাপারে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে চায় দলটি।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত আছে এবং আরো বেগবান হবে। পুরো জিনিসটাই হচ্ছে এ সরকারের পতন ব্যতীত কোনো একটি বিশেষ সমস্যা সমাধানের এখানে কোনো ইস্যু নাই। আজকে সার্বিক বাংলাদেশ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে এখান থেকে যদি মুক্ত হতে হয় তাহলে এ সরকারের পতন হতে হবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরে দেশ মুক্ত হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, জনগণ তাদের অধিকার আদায়ে এগিয়ে আসবে এবং আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে তারা তাদের মালিকানা ফিরে পাব।
কিন্তু বাস্তবতা হলো অতীতে সরকার বিএনপিকে কোনঠাসা করতে যতগুলো সিদ্ধান্তই নিয়েছে বিএনপি তার কোনটিই প্রতিহত করতে পারেনি। খালেদা জিয়ার বাড়ি, নির্বাচন কিংবা শীর্ষ নেতৃত্বের মুক্তির মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিএনপি বড় আন্দোলন সৃষ্টিতে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সুপারিশটি এমন সময় এসেছে যখন সরকার দেশবিরোধী অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করছে। যদিও জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে বরাবরই কড়া ভাষায় সমালোচনা করা হয়। এখন বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকার বিরোধী জোরালো আন্দোলন সৃষ্টিতে বিরোধীদের সক্ষমতা যাচাই হচ্ছে কিনা এমন পর্যবেক্ষণও রয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলছেন, এ ইস্যুটা এখনই আওয়ামী লীগের জন্য খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন না তিনি। তার বক্তব্য, আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে এখনও এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা এখনও শুধু একটা সুপারিশের পর্যায়ে আছে।