করোনার টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের দেহে অ্যান্টিবডির ভালো ফল মিলছে
করোনার টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের দেহে অ্যান্টিবডি পরিস্থিতির কী অবস্থা, তা গবেষণার আওতায় কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেখা শুরু হয়েছে।
এতে ভালো ফল মিলছে বলে গবেষকদল সূত্রে জানা গেছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষকদল ওই প্রতিষ্ঠানের যাঁরা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকে কয়েকজনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে।
এখনো এই কাজ চলমান রয়েছে। ওই দল এখনই তাদের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে চায় না। আরো কিছুদিন কাজের পর ফল জানানো হবে বলে জানা গেছে। তবে সরকারিভাবে এখনো এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত গবেষণার বাইরে সাধারণ মানুষের জন্য অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমোদন বা ব্যবস্থাও চালু হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কেউ চাইলেই অ্যান্টিবডি টেস্ট করার সুযোগ নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, দ্বিতীয় ডোজের আগে ও পরে দেশের কিছুসংখ্যক টিকা গ্রহণকারীর অ্যান্টিবডি পরিস্থিতি দেখবেন সরকারের গবেষকরা। এ ক্ষেত্রে ছয় হাজার মানুষের অ্যান্টিবডি দেখার ব্যাপারে একটি প্রস্তুতি চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায়। তবে দেশে এখন পর্যন্ত যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁদের কারোরই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখা হয়নি বলে নিশ্চিত করা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।
টিকা গ্রহণকারীদের অ্যান্টিবডি দেখার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে কোথাও কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা এখন পর্যন্ত নেই। এমনকি এটি কোনোভাবেই গণহারে দেখা হবে না বা প্রয়োজনও নেই বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু গবেষণার প্রয়োজনে গবেষকরাই কিছু নমুনা সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করে দেখতে পারেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শক এবং রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, টিকা নেওয়ার পর অ্যান্টিবডি দেখতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে গবেষণার প্রয়োজনে যদি গবেষকরা মনে করেন তবে তাঁরা যেকোনো সময় নমুনা পাওয়াসাপেক্ষে অ্যান্টিবডি লেভেল দেখতে পারেন।
এটা টিকা নেওয়ার কয় দিন পরে করতে হবে এমন কোনো প্রটোকলও নেই। যাঁরা গবেষণা করবেন তাঁরা নিজেদের মতো করে এটা ঠিক করে নিতে পারেন।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যদি কোনো টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি রাজি থাকেন তবে প্রতিদিনও গবেষকরা তাঁর শরীর থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে প্রতিদিন কী পরিমাণ অ্যান্টিবডি বাড়ছে-না বাড়ছে তার পরিমাপ করে দেখা যায়। আবার প্রতি সপ্তাহে কিংবা প্রতি মাসেও এটা হতে পারে। কোনোভাবেই গণহারে অ্যান্টিবডি দেখা হবে না আর দেখার দরকারও নেই। কোথাও এটি হয় না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁদের কারোই এখন পর্যন্ত দেশে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়নি। ঠিক কবে নাগাদ এই কাজ শুরু হবে সেটাও এখন বলতে পারছি না। আইইডিসিআর এ কাজটি করবে। তারা পরিকল্পনা করছে। তবে যতদূর জানি সম্ভবত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার দুই সপ্তাহ পরে কিছু মানুষের অ্যান্টিবডি দেখা হবে গবেষণাকাজের জন্য।’
এদিকে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজের আগে আমরা পর্যবেক্ষণের আওতায় কিছু মানুষের অ্যান্টিবডি পরিস্থিতি দেখব। এই সংখ্যা ছয় হাজার জনের মতো হতে পারে। এসব নিয়ে এখন প্রস্তুতিমূলক কাজ হচ্ছে, তবে চূড়ান্ত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘হয়তো আমরা এক মাসের মাথায় একবার দেখব আবার দ্বিতীয় ডোজের দুই-তিন সপ্তাহ পরে আরেকবার দেখব।’
বাংলাদেশ ফার্মাকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে এখনো সাধারণ মানুষের জন্য অ্যান্টিবডি টেস্টের সুযোগ নেই। সুযোগ থাকলে হয়তো কেউ টিকা দেওয়ার পর নিজের অ্যান্টিবডি কী পরিমাণ হলো কী হলো না সেটা দেখতে পারতেন। কিন্তু এটা দেখতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।
আর সরকারিভাবেও টিকা কার্যক্রমের আওতায় এটা করতেই হবে এমনও কোনো কথা নেই। তবে যেকোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান চাইলে তারা অল্প কিছু মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করে দেখতে পারে।
ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমি জানি আমাদের বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা গবেষণা কাজ চলছে। অনেকের অ্যান্টিবডি লেভেল ভালো পাওয়া গেছে। কাজ এখনো শেষ হয়নি। যদিও একেক প্রতিষ্ঠানের ফল একেক ধরনের আসতে পারে। কে কোন কিট ব্যবহার করবে, সেই কিটের টাইটারের পরিমাপ কী তার ওপর নির্ভর করছে ফল। যা থেকে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরিরও সুযোগ থেকে যায়।’