গাংনীর আমতৈল গ্রামের মৃৎশিল্পীদের জীবন-যাপন
এম এ লিংকন জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর:
মৃৎশিল্পের গ্রাম নামে খ্যাত আমতৈল গ্রাম। এ গ্রামের প্রায়ই ৩ হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামের মানুষের কৃষি প্রধান পেশা হলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ব্রিটিশ আমল থেকে মৃৎশিল্পের কাজ করে আসছে। মৃৎশিল্পটির মূল উপকরণ হচ্ছে মাটি। কালের বিবর্তনে মাটির বড়ই অভাব। যদিও বা মাটি কিনতে পাওয়া যায়। তাও আবার চড়া দাম।
ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এ পেশা বাদ দিয়ে কৃষি কাজে নিজের নিয়ােজিত রেখেছে। তবে মৃৎশিল্পকে প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে এখানকার প্রায়ই ৬০টি পরিবার। অর্থাৎ আমতৈল গ্রামে এখন ৬০টি মৃৎশিল্পের কারখানা রয়েছে। ৬০টি কারখানার সাথে জড়িয়ে রয়েছে ২ হাজার পরিবারের জীবনজীবিকা।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে এ আমতৈল গ্রাম।
আমতৈল গ্রামের নির্মিত মৃৎকারখানায় নারী- পুরুষ সবাই মিলে কাঁদামাটি মেখে প্রতিনিয়ত কাজ করে আসছে। এদের নিপুন হাতের শিল্পকর্মে তকতকে কাঁদামাটি হয়ে ওঠে নিত্য ব্যবহার্য বাসনপত্র, ফুলের টব, নান্দা, রিংস্লাব ও খেলনাসহ কারুকাজ করা শোপিস। দিন রাত পরিশ্রমের ফলে বেশ ভালাে আছে এখানকার কুমিরেরা।
একদিকে মাটি ও আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে প্লাস্টিকের চমকপ্রদ দ্রব্যাদির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নিপুণ শিল্পকর্ম খচিত মাটির জিনিসের কদর কিছুটা কমে গেছে। দিন দিন মাটিসহ অন্যান্য সরাঞ্জামের দাম কয়েকগুণ বাড়লেও বাড়েনি মাটির তৈরি জিনিসপত্রের দাম।
তাই এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখন পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাটির পাট ও স্লাব। এ স্লাব ও রিং জেলার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পাশের জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে।
এখানকার মৃৎশিল্পের মালিক নাজমুল হােসেন জানান, কিশোর বয়সে মনের অজান্তেই প্রতিবেশীদের দেখা দেখিতে এই কুমোর জীবনে জড়িয়ে গেছি। রাত দিন কাঁদামাটির কাজ করে জীবন চালিয়ে আসছি। পাশাপাশি আমার কারখানায় কিছু মানুষের কর্মের ব্যবস্থা করাতে পেরে অত্যন্ত ভালাে লাগছে।
নাজমুল হোসেন আরাে জানান,আগে মাঠ থেকে মাটি সংগ্রহ করা যেতো। এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। মাটির দাম বেড়েছে। আগে এক ট্রলি মাটির দাম ছিল ২০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০০০ টাকা। বছর খানেক আগে এক ট্রলি বাঁশ ও আঁখের পাতার দাম ছিল দেড়শ’ টাকা। এখন সেই পাতার দাম ৭০০ টাকা। মণপ্রতি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির ঝুট কিনতে হচ্ছে ৫০০ টাকায়। অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়লেও মাটির তৈরি জিনিসের দাম বাড়েনি। তারপরও পেশাটাকে টিকিয়ে রাখতে এটিকে ছাড়তে পারিনি।
মৃৎ শিল্পের মালিক জালাল উদ্দীন জানান, অনেক মৃৎ শিল্পীর নিজস্ব জমি নেই। কারখানার মালামাল তৈরি ও চুলার জন্য জমি লিজ নিতে হয়। এক বিঘা জমি লিজ নিতে বাৎসরিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বছরের মাত্র ৮ থেকে ৯ মাস চলে এ ব্যবসা। অনেক কুমোর বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মৃৎ শিল্পে বিনিয়োগ করেছেন। আনুসঙ্গিক খরচ মিটিয়ে কোন রকম লাভ থাকে।
তবে সরকার যদি স্বল্প সুদে কুমোরদের ঋণের ব্যবস্থা করতো তাহলে, সবাই স্বাবলম্বী হতে পারতো।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরএম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, মৃৎ শিল্পীরা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারের ঘোষিত স্যানিটেশন ব্যবস্থা শতভাগ নিশ্চিত করতে কুমোরদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এলাকার লোকজন স্বল্প মূল্যে স্লাব কিনে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করছে। এলাকা পরিদর্শন করে কুমোরদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান তিনি।