দীর্ঘ এক বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পর ৩০ মার্চ থেকে খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার
করোনা মহামারিতে দীর্ঘ এক বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পর আগামী ৩০ মার্চ থেকে খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শুরুতে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিন স্কুলে আসতে হবে। নবম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আসবে দুই দিন।
অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে আসতে হবে এক দিন। আপাতত খুলছে না প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি। গতকাল শনিবার সচিবালয়ে আন্ত মন্ত্রণালয় সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৬০ কর্মদিবস ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৮০ কর্মদিবসের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করেছি। এই ক্লাস শেষ করে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীরা যেহেতু অনেক দিন ঘরে বসে ছিল তাই আমার মনে হয়, রোজার সময়ও তাদের স্কুলে আসতে অসুবিধা হবে না। সে জন্যই এবার রোজায় ছুটি থাকবে না। তবে ঈদের সময় কয়েক দিন ছুটি থাকবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘৩০ মার্চের আগে আমরা সব শিক্ষককে টিকাদান নিশ্চিত করব। ইতিমধ্যে প্রাথমিকের দেড় লাখ শিক্ষক টিকা নিয়েছেন। অন্য শিক্ষকদের দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করিয়ে টিকাদান নিশ্চিত করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আশা করছি, টিকার সংখ্যা যত বাড়তে থাকবে, তত তাড়াতাড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারব।’
দীপু মনি বলেন, শুরুতে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস নেওয়া হবে। নবম ও একাদশ শ্রেণির ক্লাস হবে সপ্তাহে দুই দিন। অন্যান্য শ্রেণিতে সপ্তাহে এক দিন ক্লাস নেওয়া হবে। যদি পরিস্থিতি ভালো হয়, তাহলে স্কুল খোলার দু-তিন সপ্তাহ পর থেকে সব শ্রেণিতে স্বাভাবিক ক্লাস নেওয়া হতে পারে। প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাসও অবস্থা বিবেচনা করে শুরু করা হবে।’
স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক শুরু হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিবেশ পর্যালোচনা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরই মূলত গতকালের সভার আয়োজন করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল খোলার আন্দোলনের মধ্যে গত ২২ ফেব্রুয়ারি এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৭ মে থেকে হল খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়।
গতকালও শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর টিকা দেওয়ার পরই ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেব। আর ১৭ মের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষ করা হবে।’
বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনা মহামারির কারণে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী, অষ্টমের সমাপনী ছাড়াও এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হয়। তবে অন্য শ্রেণিগুলোয় পরীক্ষা ছাড়া পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হয়েছে।
তবে চলতি বছরের প্রথম দিকে করোনা সংক্রমণ কমে আসার পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার তাগিদ আসতে থাকে। গত জানুয়ারিতে এক নির্দেশনায় গত ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এরপর দুই দফা ছুটি বাড়ানোর পর ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা এলো।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও গত বছরের শেষ দিক থেকে হল বন্ধ রেখেই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দিয়ে গত সপ্তাহ থেকে ফের পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তাঁদের পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনেও নেমে পড়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা তিন দিনের আলটিমেটামও দিয়েছেন, যা গতকাল শেষ হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ফের পরীক্ষা শুরুর ব্যাপারে গতকালের বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি।