গাজীপুরে আড়াই বছরের শিশুকে অমানবিক নির্যাতন
বি এ রায়হান, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রবাসীর আড়াই বছরের এক শিশুকে সৎ মায়ের কাছ থেকে যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথ ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনায় সৎ মাকে অভিযুক্ত করে বহস্পতিবার রাতে শিশুর দাদা শ্রীপুর থানায় অভিযাগ দায়ের করেছেন। শিশুর দাদা আফাজ উদ্দিন জানান, ৮ বছর আগে প্রবাস জীবন থেকে দেশে ফিরে সাবিনা ইয়াছমিনকে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে করেন দুবাই প্রবাসী মােস্তফা ফকির। সেই বিয়ের আড়াই বছর পর তাদের কােল আলাকিত করে জন্ম নেয় এক কন্যা শিশু। এরই মাঝে মােস্তফা ফকিরের সাথে দুবাইতে পরিচয় হয় আলিফা আক্তার রিপা নামের এক নারীর। তারা জড়িয় পড়েন পরকীয়ায়। রিপা তাদের সেই সম্পর্ক পরিণয়ে রুপ দিতে প্রথম স্ত্রী সাবিনার সাথে ডিভাের্সসহ নানা শর্ত জুড়ে দেন মােস্তফা ফকিরকে। নানা ধরনের চাপে সাবিনাকে ডিভার্স দেন মােস্তফা। শিশুটির চার মাস বয়সই তার মা সাবিনার সাথ বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে তার বাবার। পরে প্রথম সংসার জন্ম নেয়া শিশুকে দেখাশােনা, মায়ের যত্ন আদর ও ভালবাসা দেয়ার শর্তে রিপাকে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেন মােস্তফা। গত ছয় মাস পূর্বে তার আড়াই বছরের শিশুকে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে রেখে ফের প্রবাসে (দুবাই) চলে যান মোস্তফা। প্রবাসকালীন জীবনে মােস্তফা তার অর্জিত আয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বেড়াইদেরচালা এলাকায় ১৪ শতাংশ জমি কিনে পাঁচ তলা ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর আলিফা আক্তার রিপার কােন সন্তান হবে না বলে চিকিৎসক জানানার পর বিভিন্ন ফন্দি করেন মােস্তফার দ্বিতীয় স্ত্রী আলিফা আক্তার রিপা। সেই বাড়িটি লিখে নিতে মােস্তফাকে নানা ধরনের চাপ প্রয়ােগ করেন। এতেও বাড়ীটি তার স্ত্রীর নামে লিখে দিতে রাজী হচ্ছিল না সে। পরে বাড়ীটি লিখে নিতে মােস্তফার একমাত্র ভবিষ্যত উত্তরাধিকার এই শিশুটির উপর নানা ভাবে নির্যাতন শুরু করেন বলে অভিযাগ করেন তার দাদা আফাজ উদ্দিন। তিনি গত ১১আগষ্ট (বুধবার) তার শিশু নাতনিকে দেখতে এসে তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। পর তাকে উদ্ধার কর প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চিকিৎসকদের পরামর্শ মত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এ ঘটনায় শিশুটির দাদা আফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে তার পুত্রবধুর বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় অভিযাগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত আলিফা আক্তার রিপা (৩০) মাগুরা জেলার সদর উপজেলার ধনপাড়া গ্রামের রজব আলী বিশ্বাসের মেয়ে। সেও একসময় দুবাই প্রবাসী ছিল। মােস্তফা কামাল ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাঁশিয়া গ্রামের মাে: আফাজ উদ্দিনের ছেলে। সে ১৩ বছর ধরে দুবাই প্রবাসী। আফাজ উদ্দিন আরও বলেন, তার দ্বিতীয় পুত্রবধু একটু উগ্র প্রকৃতির। সে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অঘটনের চেষ্টা করছে। তার ছেলে প্রবাসে চলে যাওয়ায় শিশু নাতনিকে নিয়ে সে এই বাসাতেই থাকতাে। শিশুটিকে তাদের কাছে যেতে দিত না। এই বাসাটি লিখে নিতে সে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছিল। গত বুধবার তার নাতনিকে দেখতে এসে তারা দেখতে পান সে খুব অসুস্থ। পরে দেখেন তার পায়ূপথ ও যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত। এসময় তিনি পুত্রবধুকে জিজ্ঞাসা করলে সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। তিনি আরাে বলেন, ইতিপূর্বে কয়েকবার তার নাতিকে তার সৎ মা নানাভাব নির্যাতন করেছে। তারা বিভিন্ন ভাবে সতর্ক করছিলেন অভিযুক্তকে। এরপরও তাদের কথা না শুনে নিস্পাপ শিশুটিকে এভাবে নির্যাতন করে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তার সৎ মায়ের। এ বিষয় অভিযুক্ত আলিফা আক্তার রিপা বলেন, শিশুটি ভাতের মাড়ের উপর পড়ে, আবার পা পিছলে পড়ে পায়ূ পথ ও যনাঙ্গ এমন ক্ষত তৈরী হয়েছে। তবে পায়ূপথ ছেঁড়ার বিষয় তিনি বলেন, পা পিছলে পড়ে এমন হতে পারে। বাড়ীতে কেয়ারটেকার হিসাবে আছেন মােস্তফার মামা মাে: মনাছ শেখ। তিনি বলেন, সবসময় বাড়ীতে থাকলেও শিশুটির বিষয়ে তাদের কােন তথ্য জানানাে হয়নি। আগুনে পুড়লে আমি খােঁজ পেতাম। বাড়ীতে ভাড়াটিয়া রয়েছে তারা খােঁজ পেতেন অথচ কেউই জানেন না।এমন একটি ঘটনা কাউকে কিছু বুঝতে দেননি অভিযুক্ত রিপা। হঠাৎ করে দেখি শিশুটিকে নিয়ে সে চিকিৎসকদের কাছে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলেছে গরম পানিতে এমন হয়েছে। তার ভাষ্য শিশুটিকে কারাে কাছে যেতে দিত না অভিযুক্ত রিপা। এমনকি দাদা দাদির কাছেও না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি তদন্ত করে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা মূল কারন বের করার দাবী করেন তিনি। এ বিষয় শ্রীপুর উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মইনুল আতিক বলেন, শিশুটিকে মূমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় গত ১১ আগষ্ট বিকেলে। তার পায়ূপথ ছেড়া ছিল ও যৌনাঙ্গে দগদগে ঘাঁ ছিল। আমাদের ধারণা শিশুটি মারাত্মক যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছে। দ্রুত শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সাথে তার স্বজনদের দ্রুত আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে এই শিশুটির ফরেনসিক পরীক্ষা প্রয়ােজন। যাতে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে। এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হােসেন বলেন, এমন অভিযাগে ইতিমধ্যেই তদন্ত করা হচ্ছে। এঘটনায় দােষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।