আমি কিছু করলে আমার দলের ক্ষতি: মেয়র সাদিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল
বরিশাল সিটি করপোরেনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেটি তারই এক কর্মী করেছেন। ভিডিওতে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে তার বাসার পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে বাসার পেছনে থাকা সাদা পোশাকের এক পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। তবে মেয়রকে দেখে পুলিশ সদস্য সাদিকের বাসার প্রাঙ্গণ ত্যাগ করতে থাকেন। এসময় সাদিক ওই পুলিশ সদস্যকে বলেন, আপনাদের কি মেয়রের বাসা থেকে অ্যারেস্ট করার জন্য বলছে? নিউজে বলতেছে যে আপনারা আমার প্রোটেকশনের জন্য আসছেন। আপনারা এখানে সিভিলে এসে কী করতে চান। আপনারা কি সরকারকে ডুবাইতে চান। এসময় পুলিশ সদস্য বলেন, না স্যার। মেয়র সাদিক বলেন, তাহলে আপনারা আমার বাসা থেকে যারা বের হচ্ছে তাদের হ্যারেজমেন্ট করতেছেন, প্রশাসনের লোক। আমি কিন্তু চুপ করে আছি। আপনারা কেন করতেছেন এগুলা? এই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চান আপনারা? আমি এখনও লাইভে যাইনি কিন্তু। আমাদের নেতাকর্মীদের গুলি করেছে। আপনি আমারে অ্যারেস্ট করেন। পুলিশ চলে গেলে মেয়র সাদিককে উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এসময় সাদিক বলেন, তারা আমার নেতাকর্মীদের অ্যারেস্ট করতেছে। আমার বাসায় যারা ঢুকতেছে। আমাকে অ্যারেস্ট করতে হলে আমারে বলুক, আমি অ্যারেস্ট হয়ে যাব। ভীতিকর অবস্থা কেন হবে। আমাকে গুলি করছে সেটার কোনো বিচার নাই। তারা বলতেছে যে আমাকে প্রোটেকশন, তারা কি আমাকে প্রোটেকশন দিতেছে? আওয়ামী লীগ করতে দেবে না কেউ কেউ। উনারা (প্রশাসনের লোকজন) সেই প্রক্রিয়া নিয়েছে। আমি তো আগেই বলছি, আগেই ইঙ্গিত দিয়েছে, এই ঘটনা ঘটাতে যাচ্ছে তারা। চুপ করে রইছি, মাটি কামড়াইয়া রইছি, মাংস কামড়াইয়া রইছি। গুলি হইছে। আমাদের নেতাকর্মীরা আহত হইছে। তাদের যাইতে দিতেছে না, ট্রিটমেন্ট করতে ঢাকা শহরে। কোন পরিস্থিতিতে আছি আমরা? এটা কেন করবেন? যারা আহত হইছে তাদের অ্যারেস্ট করে রাখছে। তারপর আবার উনারা বলতেছে এটার সঠিক তদন্ত চাই আমরা। আমার রেজিগনেশন লেটার দিয়ে দেব আমি যদি অপরাধী হয়ে থাকি, আমার নেতাকর্মীরা যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে এখানে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। এই মেয়রের দায়িত্বে। এসময় পাশ থেকে একজন বলেন, সে বিবৃতি দেয় ও বড় আওয়ামী লীগ তো, বড় আওয়ামী লীগ। এসময় মেয়র সাদিক উত্তেজিত হয়ে ওই লোককে বলেন, প্লিজ প্লিজ, আপনাকে কি আমি কিছু জিজ্ঞাসা করেছি? মেয়র সাদিক আবার বলতে থাকেন, অপমান অপদস্তের তো একটা সীমা আছে। উনারা চালাক, আমি রেজিগনেশন দিয়ে চলে যাব। মানে আমাকে তো অপদস্ত করে না, করে আওয়ামী লীগকে। আমাদের সরকারকে। মেয়র আমি সিটি করপোরেশনের। আমি একজন মেয়র। এখানে সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন তারা মিলে, মানে বুঝলাম না। হোয়াট ইজ দিস? তাহলে এখানে মেয়র মানে কি, এটা কোনো মেয়রের ক্ষমতা, ক্ষমতারও তো বিষয় না এটা। আমাদের চাচ্ছে কী, গুলি করলে আমরা পাল্টা গুলি করব তাদের। সেটা চাইছিল হয় তো তারা। অথবা, এই যে যা করতেছে, আমরা একটা কেন মিছিল করি না। প্রতিবাদ সভা করি না। কারণ এই সরকারটা তো আমাদের সরকার, নৌকা মার্কার সরকার, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার। আমি এখানে নাড়া দিলে পরে ক্ষতি উনাদের হবে না তো, ক্ষতি হবে আমার দলের। আমার দলের ক্ষতি করার আগে এখান থেকে সরাসরি রিজাইন দিয়ে আমি চলে যাওয়া ভালো আমার জন্য। বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে বরিশাল সদর ইউএনও-এর বাসভবনের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও ইউএনও'র পক্ষ থেকে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরের দিকে এক ঘণ্টা তার বাসায় সাদা পোশাক ছাড়াও পোশাকপরা পুলিশ মোতায়েন ছিল। এদিকে, শুক্রবার (২০ আগস্ট) সকাল থেকেই থমথমে অবস্থা বরিশাল নগরীতে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনের সামনে দেখা যায় অতিরিক্ত পুলিশ। নগরীতে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে মাঠে কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। বরিশালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে দেশের আর কোনো জেলাতে না ঘটে সেদিকে সতর্ক নজর রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যকার যে কোনো দ্বন্দ্ব দেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলায় মারাত্মক বিশৃঙ্খলা ডেকে আনবে বলেও আশঙ্কা তাদের। রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, এটি কোনোভাবেই সাধারণ ঘটনা নয়। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, এটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ। যার মাধ্যমে সরকারি দল এবং প্রশাসন এই দুটি দলকে দুর্বল করে দেওয়ার পর সে ষড়যন্ত্র যখন কিছুটা সফল হবে, তখনই পেছন থেকে মূল ষড়যন্ত্রকারীরা আবির্ভূত হবে। বাংলাদেশের জন্য এটি অবশ্যই অশনি সংকেত।