দূতাবাসগুলো পুনরায় খোলার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যে ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এরপর সে দেশ থেকে বিদেশি নাগরিক এবং ঝুঁকিতে থাকা আফগানদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে বিভিন্ন দেশ। এসময় তারা ফিরিয়ে নেয় নিজেদের দূতাবাসের কর্মীদেরও। বন্ধ করে দেয় দূতাবাস। আর এ দূতাবাসগুলো পুনরায় খোলার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান। আফগানিস্তানের গণমাধ্যম টোলো নিউজ এ তথ্য জানায়। গত দুই দশকে বিশ্বের প্রায় ৩৬টি দেশ কাবুলে দূতাবাস খোলে। বিপরীতে ওই দেশগুলোতে ৭১টি দূতাবাস ও কনস্যুলেট খোলে আফগানিস্তান। বর্তমানে সংকটময় পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অধিকাংশ দেশ আফগানিস্তানে তাদের কূটনৈতিক উপস্থিতি স্থগিত করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, দূতাবাস বন্ধের ঘটনা আফগানিস্তানকে একঘরে করে ফেলবে। আর যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন না পায় তবে আফগানিস্তান গভীর সংকটের মধ্যে পড়বে। বিশ্লেষকদের মতে, যেসব দেশ দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে আফগানিস্তানের সঙ্গে তাদের পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুহাম্মদ সেদিক প্যাটমান বলেন, বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ আফগানিস্তানকে সামরিক সহযোগিতা দিত। তাই সামরিক সহযোগিতাকে রাজনৈতিক সম্পর্কে রূপ দিতে সময় একটু লাগবেই। এদিকে তালেবান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে— যেন তারা কাবুলে বন্ধ হয়ে যাওয়া দূতাবাস পুনরায় খোলে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তারা অনুরোধ জানিয়েছে, যেন দেশটি আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় চালু করে। তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আমরা আশা করছি, যুক্তরাষ্ট্র কাবুলে তাদের কূটনৈতিক মিশন পুনরায় চালু করবে। কাবুলে তাদের শুধুমাত্র কূটনৈতিক উপস্থিতি থাকা উচিত। আমরা তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখতে চাই। এর আগে যখন তালেবান ক্ষমতায় আসে তখন পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়া কেউ তাদের সমর্থন দেয়নি। বর্তমানে তালেবান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি চাইছে। তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক বলেন, আমরা বিশ্বকে, আঞ্চলিক দেশ এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আফগানিস্তানের মাটি কারও বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। রাষ্ট্র পুনর্গঠনে বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা করুন। এদিকে দেশটির নাগরিকরাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। তারাও চান দূতাবাসগুলো খোলা হোক। কেননা, এগুলো বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। নূর আঘা নামের কাবুলের এক বাসিন্দা বলেন, বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আর এ সম্পর্ক বজায় থাকে কূটনৈতিক মিশন এবং দূতাবাসের মাধ্যম। বর্তমানে আফগানিস্তানের আগের চেয়ে বেশি বিশ্বের সহযোগিতা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘ ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ভবিষ্যতের সরকারের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্ভর করবে তালেবানের কর্মকাণ্ড এবং প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে ওপর।