৩ হাজার তাল বীজ রোপণ করেছেন একজন স্কুলশিক্ষক।
DESK NEWS 4TV : তাজ-উল ইসলাম চৌধুরী পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা এইচএম শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে। ছাত্রাবস্থায় ১৯৯৮ সালে নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন নতুন কুঁড়ি স্কুল। তবে শুধু শিক্ষকতা পেশায় সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। প্রচণ্ড রকমের বৃক্ষপ্রেমী তাজ-উল ইসলাম শিক্ষকতার পাশাপাশি নিয়মিত গাছ রোপণ করেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করেছেন। এমনকি মৌসুম অনুযায়ী গাছের চারা রোপণে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে নানা ধরনের ক্যাম্পেইন করে থাকেন। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি রোপণ করেছেন তাল বীজ। ২০০৮ সাল থেকে তিনি তাল বীজ রোপণ করা শুরু করেন এবং ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় তিন হাজার তাল বীজ রোপণ করেছেন। বিভিন্ন কারণে সব বীজ থেকে চারা না জন্মালেও তার এলাকায় এখন ছোট-বড় মিলে প্রায় ৪০০-এর মতো তালগাছ বিভিন্ন জায়গায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এ বিষয়ে কথা হয় বৃক্ষপ্রেমী তাজ-উল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে। এত তাল বীজ রোপণের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোটবেলা শুনেছি, যে তাল গাছ বোনে, সে তাল খেয়ে যেতে পারে না। কিন্তু ১৯৮২ সালে আমার মা একটি তাল বীজ বপন করেন। সেই ছোট্ট বীজ থেকে অংকুরোদগম হয়ে চারা গজিয়ে আস্তে আস্তে এখন বিশাল একটি গাছে পরিণত হয়েছে। ওই তাল গাছটিতে ২০০৬ সাল থেকে তাল হচ্ছে। আমার মা এখনও সেই গাছের তালের পিঠা বানান। এই তালের বীজই আমি বিভিন্ন জায়গায় বুনে চলেছি ২০০৮ সাল থেকে। কখনও কখনও আমার বন্ধুরাও আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমার লাগানো বীজের গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একটি তালগাছ না কাটলে ১৫০ থেকে ২০০ বছর বেঁচে থাকে। শতভাগ পরিবেশবান্ধব, বজ্রপাত প্রতিরোধী উপকারী বৃক্ষ হলো তালগাছ। একবার বুনলেই হলো— কোনো বিশেষ যত্নের প্রয়োজন নেই। মাটিতে ৪-৫ ইঞ্চি গর্ত করে, গর্তে পাকা তালের বীজ রেখে গর্ত ভরাট করে দিলেই ৫-৬ মাস পরে এই বীজ থেকে দুটি পাতা গজিয়ে আগমনি বার্তা জানান দেয়। সব ধরনের গাছের প্রতি রয়েছে আমার দুর্বলতা। তবে তালগাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে, সেটি হলো বজ্রপাত। তালগাছ বজ্রপাত প্রতিরোধী বৃক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গরু ছাগল অন্যগাছ খেয়ে সাবাড় করতে পারলেও তালগাছ খায় না। তালের পিঠা, পায়েস, তালের শাস, তালের গুড়, তালের রস অনেক সুস্বাদু। এ ব্যাপারে তাজ উল ইসলাম চৌধুরীর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা এইচ এম সামসুল হক চৌধুরী বলেন, আমার ছেলের এ কাজকে আমি সাধুবাধ জানাই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সে ভূমিকা রাখছে। তাকে দেখে আমাদের এলাকার অনেকেই এখন গাছ লাগানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ব্রাম্মনগাঁও এলাকায় রাস্তার দুই পাশে প্রচুর তাল গাছ। এসব তালগাছই লাগিয়েছেন তাজ উল ইসলাম। তিনি প্রচুর গাছ লাগিয়েছেন। রাস্তার পাশে তালগাছ দেখলেই বলা যায় এটা তাজ উল ইসলামের লাগানো গাছ।