ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নীরবে চলছে দালাল দৌরাত্মে দিশেহারা আমজানতা!
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঝিনাইদহ চলছে দালালদের নিয়ন্ত্রণে। অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার বিষয়ে আক্ষেপ নেই কোন ভুক্তভোগীর।সবার কাছেই এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নতুন পাসপোর্ট তৈরি ও পুরাতন পাসপোর্ট হালনাগাদ প্রকৃয়ার ৯৫ ভাগ কাজ দালালদের মাধ্যমেই হচ্ছে। প্রত্যেক শ্রেণি ও মেয়াদের পাসপোর্ট তৈরির সরকারি খরচের জায়গায় অতিরিক্ত টাকা নিয়েই প্রতিদিন আবেদন পড়ছে শতাধীক। দালালরা ভুক্তভোগীদের ব্যাংক ড্রাফটের খরচ ছাড়া অতিরিক্ত টাকা অফিস খরচ হিসাবেই নিয়ে নিচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, দালাল না ধরে অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করলে বিভিন্ন ভুল ধরে,সময় বেশি লাগে। ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই দালালের মাধ্যমে কাজ করলে তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টিও তারাই ম্যানেজ করবেন বলে সাধারণ ও ৫ বছর মেয়াদি একটি পাসপোর্টের ৪০২৫ টাকার জায়গায় সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে পাসপোর্ট। সর্বশেষ বছর দুয়েক আগে পাসপোর্ট অফিসে দালাল বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও করোনার পর থেকেই পাসপোর্ট অফিসে জেকে বসেছে দালাল সিন্ডিকেট। দালালরা নিজেরাই বিসিএস ক্যাডারের সিল মোহর বানিয়ে নিজেরাই স্বাক্ষর করে সত্যায়িত করে দেয় আবেদন পত্র। ৩১ জানুয়ারি ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নতুন উপ পরিচালক হিসাবে শাখাওয়াত হোসেন যোগদান করেছেন। এর আগে উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক হটাৎ বদলি হয়েছেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মোঃ বাবুল আক্তার জানান, প্রতিদিন গড়ে ৯০-১১০টি আবেদন আসে। তার মধ্যে হালনাগাদ ও নতুন দুই ধরণেরই রয়েছে। জানাগেছে, ঝিনাইদহ শহর ও বিভিন্ন জায়গায় পাসপোর্ট অফিসের দালাল রয়েছে। সোমবার দুপুরে পাসপোর্ট অফিসে প্রিন্ট হয়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে পাসপোর্ট নিতে আসেন সাগান্না গ্রামের নুর আলী জোয়ার্দারের ছেলে সেলিম হোসাইন। তিনি পাসপোর্ট হালনাগাদ করেছেন। তার ডেলিভারি ¯িøপ নাম্বার ৪২১৫-০০০০১৮৯২২। ১০ বছরের জন্য হালনাগাদ করেছেন তিনি। তিনি জানান, সাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর মাসুদের মাধ্যমে তিনি এই হালনাগাদ করেছেন। মাসুদই সব কিছু করে দিয়েছে। মাসুদ সাড়ে ৮ হাজার টাকা নিয়েছে। সোমবার ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য ফিঙ্গার দিতে আসেন কালীগঞ্জ পৌর এলাকার কাশীপুর গ্রামের আইনাল খার ছেলে মোহাম্মদ আলী মোর্তজা। তিনি পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেছেন। থানায় জিডি করে নতুন পাসপোর্ট তোলার জন্য আবেদন করেন। আলী মোর্তজা জানান, চাঁদপুরের বাবুলের মাধ্যমে তিনি আবেদন করেছেন। তার শ্বশুরই সব কিছু করে দিয়েছেন। টাকাও তিনি দিয়েছেন। কত টাকা লেগেছে সেই ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। পাসপোর্ট নিতে আসেন খুরশি গ্রামের জাকির বিশ্বাসের ছেলে ইকারুল। তিনি ১০ বছর মেয়াদি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। তিনি আরাপপুরের সুকান্ত সেনের মাধ্যমে আবেদন করেন। তার খরচ পড়েছে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। তিনি জানান, ছবি তোলার সময় ও ফিঙ্গার দেওয়ার সময় তিনি এসেছিলেন সব কিছু সুকান্ত দাদা অফিসের লোকদের সাথে কথা বলেই করে দিয়েছেন। সাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর মাসুদের কাছে জানতে চাওয়া হয় নতুন পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে? তিনি জানান,ব্যাংক ড্রাফট ৪০২৫ টাকা,পুলিশ ভেরিফিকেশন ও অফিস খরচ ধরে সাড়ে ৭ হাজার লাগবে। তার কাছে বলা হয়,” আমার এক ভাই জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করে বিদেশ ছিল অনেক দিন। তখন তার জাতীয় পরিচয় পত্র হয়নি। জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্ম তারিখের মিল নেই নতুন করে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো যাবে কিনা? তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসপোর্ট না দেখে বলতে পারবো না। দালালদের দৌরাত্ব বিষয়ে উপ পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমি আজকেই যোগদান করেছি। সবাইকে জিজ্ঞাসা করে আবেদন জমা নেওয়া সম্ভব হয় না। এই কারণে কিছু লোক সুযোগ নিয়ে থাকতে পারে। আমাদের অফিস উন্মুক্ত। আপনারাও চাইলে সরজমিনে খোঁজ খবর রাখতে পারেন। অনিয়ম রোধ করা গেলে সবার জন্যই ভালো।” অফিস সংশ্লিষ্ট কাদের সাথে যোগাযোগ করে বা অফিস খরচের টাকা কাদের পকেটে দিয়ে দালালরা নির্বিঘেœ এই কাজ চালাচ্ছেন তা তদন্ত হওয়া দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল।