বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় ভারতের কাছে বাংলাদেশের কী দরকার?
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে আরোপিত বাধাগুলো দুর করা। এছাড়া দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশটির প্রয়োজন বাংলাদেশকে সহায়তা করা। এতে করে পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, রপ্তানিও বাড়বে। এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশের বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয়রা।
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের(সিপিডি) ফেলো এবং সাবেক নির্বাহি পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ১০ শতাংশ হয়ে থাকে ভারতের সঙ্গে। একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারও প্রতিবেশী দেশটি। তবে দুই দেশের বিশাল বানিজ্য ঘাটতির কারণে ভারত বাংলাদেশ থেকে যতটা সুবিধা নিচ্ছে বাংলাদেশ সেটা পারছে না।এ ঘাটতি দুরীকরণে এই মুহূর্তে ভারতের কাছে বাংলাদেশের আসলে কী দরকার?
আবদুল মাতলুব আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশের পণ্য ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রাপ্তির বাধাগুলো(নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার) দুর করতে হবে। এতে বাংলাদেশের পণ্য ভারতে রপ্তানি করা অনেক সহজ হবে। ফলে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে আরও বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।’
ভারতের যেসব ব্রান্ডের পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় সেসব পণ্য ভারতেও বিক্রি করার সুযোগ দিলে বাংলাদেশ লাভবান হবে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ভারতের যেসব পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় যেমন, ডাবুর, ইমামি এসব পণ্য ভারতেও রপ্তানি করার সুযোগ দিতে হবে। কেননা ভারতে এসব ব্রান্ড পরিচিত বলে সহজেই ক্রেতাদের কাছে পৌছানো যাবে।’
শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের বাধাগুলো দুর করা জরুরী বলে মনে করেন সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানও।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকারে যে বাধাগুলো সম্প্রতি আরোপ করা হয়েছে, যেমন ‘এন্টি ডাম্পিং শুল্ক’ এসব দুর করতে রপ্তানিকে সহজ করতে হবে।’
আন্তঃরাষ্ট্রিক যোগাযোগ ও বিনিয়োগকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে উল্লেখ করে সিপিডির সাবেক এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাঁধাগুলো দূর হলেই যে রাতারাতি দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে যাবে, এমন নয়। এজন্য প্রয়োজন উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ানো।বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলার সবচেয়ে বড় উপায় পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ানো। এই সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখতে পারে যোগাযোগ ও বিনিয়োগ।’
‘বাংলাদেশ-ভারত যে রেল যোগাযোগ রয়েছে, তা আরও সম্প্রসারণ করলে বা নতুন নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির যে কথা শোনা যাচ্ছে তা যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে আমাদের শক্তি(এনার্জি) ঘাটতি কমবে।আর শক্তি ঘাটতি কমলে তা সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সহায়ক হবে’ বলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
বর্তমানে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ৪ হাজার ৭৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল ৬৮৯ দশমিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার বিপরীতে ৫৪৫০.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। অর্থাত্ ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৪৭৬১.০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান ভারত সফরে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং শুল্ক-অশুল্ক বাধাগুলো দূর করার বিষয়েও ভারতের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে আশা অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।