মুন্সীগঞ্জে পার্সপোর্ট দুর্নীতিতে দালালদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ ও অফিস কর্তাব্যক্তিরা
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:পাসপোর্ট অফিসে দালাল এবং পুলিশ ভেরিফিকেশনে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। অফিস কর্মকর্তাদের সাথে দালালদের সরাসরি সংযোগ থাকার কারণে প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়ছেন পাসপোর্ট গ্রাহকরা। পাসপোর্টের সাথে সবকিছু সংযুক্ত থাকলেও নানা অজুহাত দিয়ে অর্থ বিনিময়ে চলছে কার্যক্রম। প্রতিদিনই পাসপোর্ট অফিসে চলছে অনিয়ম এবং অভিযোগের বাস্তব ও অভিনব চিত্র। অপরদিকে মুন্সীগঞ্জের পাসপোটর্ করতে আসা গ্রাহকগণও দালাল ছাড়া যেন পাসপোর্ট করতে না রাজ। দালালদের মাধ্যমেই ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই পাসপোর্ট করা যায়। ফলে দালালদের উপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হচ্ছে পাসপোর্ট করতে আসা গ্রাহকদের।পাসপোর্ট গ্রাহক আমিনুল ইসলাম বাবুল জানান, পুলিশ পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করতে গেলে ৫০০-২০০০ টাকা তাদের খরচ দিতে হয়। খরচদিতে না চাইলে তারা হুমকি দিয়ে নানান কথা বলে। আমার বাসায় পুলিশ আসলে আমি টাকা দিতে না চাইলে পুলিশ বলে, টাকা না দিলে জীবনেও পাবি না পাসপোর্ট, রিপোর্ট খারাপ দিয়ে দিব। নিরুপায় হয়ে আমি অতিরিক্ত টাকা দিয়েই পাসপোর্ট করেছি।সিরাজদিখানের শেখেননগর থেকে দালাল ধরে আসা পারভেজ হোসেন জানান, গ্রাম থেকে ৫ হাজার টাকা কন্ট্রাক্ট করে পাসপোর্ট করতেএসেছি। পাসপোর্ট অফিসের আনসার কর্মকর্তা খায়রুলের সাথে টাকা নিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। সাধারণ পাসপোর্টে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা নির্ধারিত জমা দেয়ার কথা থাকলেও এখানে ভিন্ন চিত্র। ৫ হাজার টাকা দিয়ে দালালদের হয়ে আসলে দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়া যায়এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন সহজ হয়।পাসপোর্ট গ্রাহক রাসেল জানান, পাসপোর্ট করতে সংযুক্ত ডকুমেন্টগুলো নিয়ে অফিসে আসলে তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয়। হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন নিয়ে আসলে ফিরিয়ে দেয় কিন্তু দালাল হয়ে আসলে তা বৈধ হিসাবে গ্রহণ করে। আমি দালাল ধরে ৭ হাজার টাকা চুক্তি করে এসেছি খুব সহজেই হয়ে গেছে এমনকিপুলিশ ভেরিফিকেশন করতে না গিয়েও ভাল রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছে।পাসপোর্ট নিতে আসা গ্রাহক আশা জানান, আমার শ্বশুর ৫ হাজার টাকা চুক্তি করেছে। ৫০০ টাকা দিয়ে দিয়েছি, পুলিশ বাসায় আসেনি কাজ হয়ে গেছে। আমি বেশি কিছু জানি না আমার শ্বশুর দালালের সাথে চুক্তি করেছে, এখন পাসপোর্ট পেয়েছি।সিরাজদিখান থেকে আসা শাবিত্রী জানান, আমরা তিনজন পাসপোর্ট করতে এসেছি। দালাল ধরে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা কন্ট্রাক্ট করে এসেছি খুব দ্রুত এবং সহজেই হয়ে গেছে। এখন আমরা পাসপোর্ট হাতেপেয়েছি।পাসপোর্ট করতে আসা সৌরভ মন্ডল জানান, চেয়ারম্যানের সিল ও স্বাক্ষরসহ ফর্মটি সত্যায়িত করে এনেছি। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা বলছে, সে কীভাবে সত্যায়িত করে, এটি হবে না বলে ফিরিয়ে দিয়েছে। পাসপোর্ট অফিস এলাকার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মান্নান দর্পন সত্যায়িত করতেও ২০০টাকা নিয়েছে।এই ব্যপারে পাসপোর্ট অফিস এলাকার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মান্নান দর্পন জানান, আমি সত্যায়িত করে দিয়েছি কিন্তু তা টাকার বিনিময়ে না। দালাল ধরে এসে তারা প্রতারিত হয়ে টাকা দিচ্ছে, এমনটি হলে আমি ব্যবস্থা নেব।পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক হালিমা খাতুন জানান, প্রতিদিনএই পাসপোর্ট অফিসে ৭০-৮০টি পাসপোর্ট জমা পড়ে এবং ডেলিভারিও প্রতিদিন ৭০-৮০টি হয়। বর্তমানে কম পাসপোর্ট সিজনে ১০০-১৫০টিজমা পড়ে। আমি যোগদান করার পর প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্টপরিচালনা করেছি। আমার অফিসের কোন কর্মকর্তা যদি দালালের সাথে জড়িত থাকে কিংবা অর্থের কোন লেনদেন থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ সুপারের সাহায্যে আমি পুলিশ নিয়ে পাসপোর্ট এলাকায় অভিযান চালিয়ে দালাল নির্মূল অভিযান পরিচালনা করি।মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম পিপিএম জানান, পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি আমরা অবগত নই। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করতে পুলিশের টাকা নেয়ার ব্যাপারটি আমি খতিয়ে দেখছি। কোন পুলিশ সদস্য যদি অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমার মোবাইল সব সময় এর জন্যখোলা আছে, পরিচয় গোপন করে আমি আমার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এর আগেও আমি এক নারীর মোবাইল পেয়ে এই ব্যাপারেতার সহায়তা করেছি ও জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।অন্যদিকে দালাল এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের টাকা ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দালালদের সাথে পুলিশের সংযোগসরাসরি থাকায় দেখা দিয়েছে গ্রাহক হয়রানী।