দেশ বিক্রির তত্ত্বে ফেসবুকজুড়ে সরেস আলোচনা
‘দেশ বিক্রি হয়ে গেলো’ এই একটি বাক্যই যেন ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে পুরো ফেসবুকের দেয়াল জুড়ে। নানান সরেস আলোচনার মধ্য দিয়ে উঠে আসছে নানান জনের নানা মতামত।
শনিবার রাতে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ভারতের সঙ্গে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দেশের যা বাকি ছিলো সবকিছু এই সরকার বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন পূরণ করতে কাজ করে যাচ্ছে। তারা দেশের কিছুই রাখেনি, সব বিক্রি করে দিয়েছে।’
আর তারপরই তার কথা নিয়ে ফেসবুকে শুরু হয় যতসব আলোচনা-সমালোচনা।
প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর
এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে দেশের যা বাকি ছিলো সবকিছু এই সরকার বিক্রি করে দিয়েছে।’ -বেগম খালেদা জিয়া
তা হলে কি এখন আর বাংলাদেশ নাই? বেগম খালেদা জিয়াও কি তা হলে ইন্ডিয়ান পলিটিশিয়ান? এর আগে তিনি বলেছিলেন, ফেনী পর্যন্ত নাকি ইন্ডিয়ার দখলে চলে যাবে। এখন বলছেন পুরো দেশটার যা কিছু ছিলো সবই বিক্রি হয়ে গেছে।
ভেবে পাই না, এরা জাতীয় নেতা হন কিভাবে? আমাদের স্ট্যান্ডার্ড কি এতোটই নিচু?
রাজনীতি বিশ্লেষক বিজন সরকার
তার ফেসবুকে লিখেছেন, মোদি ও হাসিনার একান্ত আধ ঘণ্টার বৈঠকটি ভারত বিরোধী অপশক্তি গুলিকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। বিশেষ করে ভারত বিরোধী গ্রুপের প্রধান খালেদা জিয়াকে।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, শেখ হাসিনা নাকি দেশটাকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। হাহাহাহা, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের “ভারত সমর্থন অর্জন প্রজেক্ট” শতভাগই ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়া স্বরূপে ফিরে গেলেন।
চীনের সাথে আমাদের রয়েছে সবচেয়ে বড় সামরিক চুক্তি। চীন ছিল আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী। ভারত আমাদের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে, আর সেই ভারতের সাথে একটি সামরিক সমঝোতা স্বাক্ষরেই দেশ বিক্রি হয়ে গেছে!!!
জঙ্গি জামায়াত শিবির ও ইসলামিক দলগুলি পাকিস্তানকে খণ্ডিত করার জন্য আজীবন ভারত বিরোধিতা করবে, কিন্তু বাকিরা?
দেশে বেইমানদের মুখোশ স্লোলি বাট সিউরলি উন্মোচিত হচ্ছে।
জহির আহমেদ
নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তার পোস্টে লিখেছেন, ভেবেছিলাম মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টটি রিনিউ করব না। দেশ বিক্রি হয়ে গেলে এক খরচেই নতুন ভারতীয় পাসপোর্টের মালিক হবো। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি দেশটা বাংলাদেশই আছে। একটা গল্প বলি!!
হলে উঠার পর একটা গল্প খুব প্রচলিত ছিল। হলের কয়েক বড় ভাই একদিন অশিক্ষিত একজন ধনী মানুষকে কার্জন হলে ধরে আনেন। ভবনগুলোকে দেখিয়ে বলেন পুরো জায়গাটা তাদের। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জায়গাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উনাদের কাছেও টাকা নাই। সেজন্য পুরো জায়গাটি বিক্রি করতে চান। ধনী লোকটি সস্তার অফার পেয়ে যারপর নাই খুশি। দ্রুত টাকা দিয়ে একটা বায়না দলিল করে ফেলেন। পাছে না আবার কেউ কার্জন হলটি কিনে ফেলেন এই ভয়ে। পরে আসল ঘটনা জানতে পেরে লোকটির তো মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা। আর বড় ভাইরা ততদিনে টাকা হজম করে নতুন উল্লুকের সন্ধানে। এর আগেও কার্জন হল বিক্রি হয়েছে। যারা বেচেছে আর যারা কিনেছে তাদের কোন খোঁজ না থাকলেও কার্জন হল যাদের ছিল তাদেরই আছে !!
দেশ বিক্রির এই জুজুর ভয় ছোটকাল থেকে শুনে আসছি। কতবার যে দেশটা বিক্রি হয়ে গেছে। সব বেচাবিক্রির শেষে এটা আমার দেশ। আমার প্রানের বাংলাদেশ আমাদেরই থাকবে!!
সংস্কৃতি কর্মী সাগর লোহানী
লিখেছেন, তারানা আপা আপনার তো গুগল/ফেসবুকে অনেক জানাশোনা একটু ওদের বলবেন জিপিএস টা এডিট করে দিতে?
ওরা দেখি এখনও আমার অবস্থান Dhaka, Bangladesh দেখাচ্ছে! গাধারা কি জানে না যে গতকাল বিক্রয় সম্পন্ন হয়েছে?
প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন
লিখেছেন, একটা দেশ কতবার বিক্রি হয়? জন্মের পর থেকে শুনতেছি আওয়ামী লীগ দেশটারে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিছে।
সর্বশেষ আজকেও ম্যাডাম জিয়া আবার বললেন, দেশ বিক্রি করে শেষ রক্ষা হবে না।
সারা বিশ্বে প্রশংসিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সময়ও ম্যাডাম বলেছিলেন, ফেনীর পর ঢুকতে গেলে ভারতের ভিসা লাগবে।
এক সাংবাদিক বিএনপির মুখপাত্র রিজভী আহমেদকে বিক্রির প্রশ্ন তুলতেই, রিজভী ভাই নাকি বলেছেন জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশটাকে ভারতের কাছ থেকে কিনে নিয়ে আসে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশ আবার বিক্রি করে দেয়।
সাংবাদিক পুনরায় প্রশ্ন করলো, দেশ কেনার এতো টাকা আপনারা কোথায় পান? রিজভী আহমেদ নিরুত্তর।
এই জন্যই কি আপনারা দেশটারে লুটেপুটে টাকা ইনকাম করেন- সাংবাদিক এই প্রশ্ন করতেই ক্ষেপে গিয়ে রিজভী আহমেদ বললেন, আপনিও কি ভারতের দালাল নাকি, এতো প্যাচাঁন ক্যান মিয়া …..
বিষয়টি নিয়ে আরো একটু মজা করে প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী
লিখেছেন, দেশ বিক্রি হইয়া যাইবার পর বিএনপির জন্য একটি পরিবর্তিত যুতসই নাম আহবান করা হইতেছে।
হাসিব মাহমুদ
নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, দেশ বিক্রির প্রতিবাদে হরতাল ডাকলে সেটার আওতায় কি ইন্ডিয়াও পড়বে? টেকনিকালি স্পিকিং, দেশ বিক্রি হয়ে যাবার পর বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকে না। তখন ইন্ডিয়া হয়ে সব কিছু। সুতরাং বিক্রি হয়ে যাওয়া সারাদেশজুড়ে হরতাল মানে পুরো ইন্ডিয়াতে হরতাল।
প্রবাসী চিকিৎসক মিলটন হাসনাত
লিখেছেন, হাসিনা দেশটাকে ভারতের কাছে বেচে দিয়েছেন- খালেদা
লেখাপড়া শিখবে বলে কুমির তার সাত সন্তানকে শিয়ালের পাঠশালায় রেখে গেলেন। টাউট শিয়াল এক এক করে কুমির ছানাগুলোকে খেয়ে ফেললেন, রইল বাকি এক। মা কুমির তার সন্তানদের দেখতে এলে ঘুরেফিরে এক কুমির ছানাকেই সাতবার দেখালেন শিয়াল পন্ডিত। মা কুমির খুশি মনে জলে ফিরে যান।
একটাই দেশ বাংলাদেশ। তাকে বারবার ভারতের কাছে বিক্রি করছেন শেখ হাসিনা। ক্রেতা হিসেবে ভারতও মনে হয় একটু বলদ গোছের। ম্যাডাম আর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী রেজভী বুঝলেও ভারত কেন যে তা বোঝে না। একই মাল তারা শেখ হাসিনার কাছ থেকে বারবার কিনছেন।
ম্যাডামই বা এখন কী করবেন? দেশটাই তো নাই! তাহলে ভবিষ্যতে কীভাবে রাজনীতি করবেন? নির্বাচিত হয়ে কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন?
ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু
লিখেছেন, শুভ মধ্যাহ্ন বাংলাদেশ।
থুক্কু! শুভ মধ্যাহ্ন ভারত।
বাংলাদেশকে তো শেখ হাসিনা গতকালই ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।
লেখক ও সাংবাদিক অনিকেত রাজেশ
লিখেছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম- ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করব। খালেদা জিয়ার বক্তব্য থেকে জানলাম, শেখ হাসিনা ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দিয়েছেন। যাক, ভিসাবিষয়ক জটিলতা থেকে মনে হচ্ছে বেঁচে গেলাম!
ফটোগ্রাফার সজীব পাল
লিখেছেন, গতকাল দেশ বিক্রি হয়েছে। কিছু বাংলা টাকা ক্যাশ ছিল, ওগুলা কিভাবে রুপিতে পরিবর্তন করবো?