ফেসবুক: আসল অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারে বিটিআরসিতে আবেদনের সুযোগ
ভুয়া অ্যাকাউন্ট হিসেবে আসল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে থাকলে পুনরুদ্ধারে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বন্ধ হয়ে যাওয়ার তালিকায় পরিচয় গোপন করে খোলা অ্যাকাউন্ট, হয়রানি ও কুৎসিত মন্তব্য করা হয় এমন অ্যাকাউন্ট এবং সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই এমন অ্যাকাউন্টগুলো আছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার।
‘তবে যাদের আসল অ্যাকাউন্ট ভুল করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তাদেরকে সাধ্যমত সহযোগিতা করা হবে,’ বলে জানান তিনি।
চ্যানেল আই অনলাইনকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব বলেন, ‘সুপরিচিত কারও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়েছে এরকম কোন তথ্য আমাদের কাছে এলে আমরা ফেসবুককে জানাবো। আমরা ফেসবুককে জানাতে পারবো যে এই অ্যাকাউন্ট আসল।’
অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলেও সেটি পুনরুদ্ধারের পথও ফেসবুক রেখেছে বলে জানান তিনি। বলেন,‘ফেসবুককে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টের স্ক্যানড কপি জমা দিতে পারেন। এরপরও না হলে আমাদেরকে অবহিত করতে পারেন। একেবারে গণহারে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হচ্ছে এটা বলাটা ঠিক হবে না।’
ফেক অ্যাকাউন্ট বন্ধের জন্য সরকার ফেসবুককে অনুরোধ করেছে। তবে বর্তমানে যেসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ হচ্ছে সেগুলোর সবগুলোই যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ মেনেই হচ্ছে এমনটা নয় বলে জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
ভুলে কারও আসল অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলে সেই ব্যক্তি চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবর দরখাস্ত করতে পারেন বলেন জানান তিনি।
চ্যানেল আই অনলাইনকে ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন: ফেক অ্যাকাউন্ট বন্ধে বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। বাংলাদেশ থেকে চালানো ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো এর আওতাতেই বন্ধ হচ্ছে। তবে এই বন্ধ করে দেয়া অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে আসল অ্যাকাউন্টধারী কেউ প্রয়োজনে বিটিআরসির কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। এজন্য তাকে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদন পেলে সহায়তার চেষ্টা করা হবে।
‘তবে আবার অ্যাকাউন্ট চালু করা না করার ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়া সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশের লাখ লাখ আইডি ভুয়া অভিযোগে বন্ধ করে দিচ্ছে ফেসবুক। তবে, এর উল্লেখযোগ্য একটা অংশ ভুয়া না হলেও ফেসবুকের কর্তন নীতির আওতায় পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। ফেসবুক ভুয়া আইডি বন্ধ করার সম্ভাব্য যে ৩ শতাংশ হারের কথা বলেছে তাতে ৯ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।
আবার বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় গণমাধ্যম এবং ব্যক্তিত্বের পেজ হিসাব করে দেখা গেছে, তারা গড়ে ৩ শতাংশ হারে লাইক হারিয়েছে। সে হিসাবেও বন্ধ হয়ে যাওয়া আইডির সংখ্যা ৯ লাখ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে, এ ৯ লাখের সবার আইডি যে ভুয়া এমনটা নয়। অনেকেই চ্যানেল আই অনলাইনে ফোন করে জানিয়েছেন, তাদের আইডি আসল হওয়ার পরও ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছে।
ফেসবুক বলেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ শুরু হয়েছে। একই ধরনের পোস্ট বারবার দেওয়া, একই লিংক বার বার শেয়ার করা, পর্ন ওয়েবসাইটের লিংক, ছবি ও ভিডিও শেয়ার ইত্যাদি বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে ভুয়া আইডিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করা হচ্ছে।
এরকম ভুয়া আইডিগুলোর উপর বিশেষ নজর রাখা হবে বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফেসবুকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে ভুল তথ্য, ভুয়া খবর ঠেকানোর অংশ হিসেবে আইডিগুলো বন্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া আরো কিছু আইডি চিহ্নিত করা হচ্ছে।
মূলত সাধারণ ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করতে ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর হাত থেকে মুক্তি দিতেই ফেসবুকের নতুন এই পদক্ষেপ।