মোদি ঢেউয়ে’ টালমাটাল আম আদমী-কংগ্রেস
দিল্লীর তিনটি পৌরসভার নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দলটির এমন বিজয়ের পর এখন লড়াই মূলত দ্বিতীয় স্থান নিয়ে।সেই লড়াইয়ে জয়ী আম আদমী পার্টি (এএপি) অার তৃতীয় হয় কংগ্রেস।
এমন পরাজয়ের পর দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের দিল্লীর প্রধান অজয় মাকেন পদত্যাগ করেছেন আর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) জালিয়াতিকিই হারের জন্য দায়ী করেছে এএপি।
এই বিশাল জয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দক্ষ শাসনের সাধুবাদ জানিয়ে বিজেপি প্রধান অমিত শাহ বলেছেন, দিল্লীবাসী নেতিবাচক রাজনীতি, অজুহাতের রাজনীতি বর্জন করেছে।
দিল্লীর পৌরসভা নির্বাচনে এমন পরাজয় আম আদমির জন্য বড় দুঃসংবাদ। আর কংগ্রেস প্রধানের পদত্যাগও ইঙ্গিত দেয় দলটির শোচনীয় অবস্থার।বিজেপির এই জয় যে অপর দুই দলকেই টালমাটাল পরিস্থিতিতে ফেলেছে, তা বলা যায়।
২০১২ সালে দিল্লী পৌরসভাকে (এমসিডি) তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এমসিডি নর্থের ১০৪ ওয়ার্ডের ৬৪টিতে, এমসিডি সাউথের ১০৪টি ওয়ার্ডের ৭০টিতে এবং এমসিডি ইস্টের ৬৪টির মধ্যে ৪৯টিতে জয় পেয়েছে বিজেপি। আর এর ফলে এই তিন পৌরসভাতেই এখন বিজেপির নিয়ন্ত্রণে। সর্বমোট ২৭২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮৩টিতে বিজেপি, এএপি ৪৪টিতে এবং কংগ্রেস ৩২টিতে জয় পায়।
প্রতিটি পৌরসভাতেই গত বারের চেয়ে ভালো করেছে বিজেপি। নর্থে ৭টি, সাউথে ১২টি এবং ইস্টে ১৪টি বেশি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে বিজেপি। বিজেপির এই ভূমিধস জয়ের পর কাউন্সিলর হিসেবে অধিকাংশই নতুন মুখ দেখা যাবে। কারণ বিজেপি তাদের সিটিং কাউন্সিলরদের বসিয়ে ২৭২ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬২টিতেই নতুনদের এনেছে।
এমসিডি নির্বাচনের ফলের পর দিল্লীবাসীর প্রশংসা এবং কেজরিওয়ালের কঠোর সমালোচনা করেছে বিজেপি। বিজেপির দিল্লী প্রধান মনোজ তিউয়ারি বলেন, দিল্লীর জনগণ তাদের প্রত্যাহারের অধিকার চর্চা করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কেজরিওয়াল (হারের পর) দিল্লীর জনগণের হুমকি ও অভিশাপ দিচ্ছে বলে আমরা দুঃখিত, আমরা এর নিন্দা জানাই। আমি খুশী যে দিল্লীর জনগণ এমন লোককে বর্জন করেছে।
এএপিকে নিদারুণ ব্যর্থ উল্লেখ করে বিজেপির শাজিয়া ইমি (যিনি এএপির সাবেক সদস্য) কেজরিওয়ালকে ‘ড্রামা কুইন’ বলে অভিহিত করেন। বিজেপির সাম্বিত পাত্রা বলেন, কেজরিওয়াল ভেবেছিলো সে দিল্লীর মূখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হবে। আগ্রাসী আচরণের জন্যই সে নিবার্চনে পরাজিত হচ্ছে।
অপরদিকে এমন লজ্জ্বাজনক হারের পর একে ‘মোদি ঢেউ’ নয় বরং ‘ইভিএম ঢেউ’ বলে অভিহিত করেছেন এএপি নেতা গোপাল রাজ। ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের জালিয়াতির ফলেই বিজেপি জয় পেয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। দিল্লীর উপ-মূখ্যমন্ত্রী মানিশ সিসোদিয়া বলেন, ইভিএমন জালিয়াতি ছাড়া বিজেপির জয় অসম্ভব।
আজকের এই হার এএপির রাজনীতিতে অশনিসংকেত। দুই বছর আগে দিল্লীতে এবং গত মাসে পাঞ্জাব ও গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনেও লজ্জ্বাজনক পরাজয় বরণ করে নিতে হয় দলটিকে। কংগ্রেসও এই নির্বাচনকে ঘিরে দিল্লীতে তাদের রাজনৈতিক পুনঃর্জীবনের আশা করেছিলো। তারাও ২০১৫ এর দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে একটি আসনও পায়নি এবং এর আগের বছরের জাতীয় নির্বাচনেও পায়নি একটি সংসদীয় আসন।
কংগ্রেসের দিল্লী প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করে অজয় মাকেন জানিয়েছেন আগামী এক বছরে তিনি দলের কোন পদবী নিবেন না। তবে কংগ্রেসকে তিনি আজকের সবচেয়ে সফল বলেও মন্তব করেন। বলেন, ভোটে ভাগ বসাতে পারা কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় সাফল্য, যদিও আরও ভালো ফলের আশা করেছিলেন তিনি। এই পরাজয়ে মাকেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও একটি কারণ, যার জেরে এমসিডি নির্বাচনের আগে দিল্লীর বেশ কয়েকজন কংগ্রেস নেতা বিজেপিতে যোগ দেন।
এবছর রাজ্য এবং স্থানীয় নির্বাচনে বিজেপির জয়ের ধারায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন আজকের জয়। কয়েক দশক ধরেই এমসিডিতে আধিপত্য রেখেছে বিজেপি। ২০১৫ সালে দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনে তারা মাত্র ৩টি আসন হারায়, যেখানে এএপি ৭০টির মধ্যে ৬৭টি হারায়। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দিল্লীর ৭টি সংসদীয় আসনেই জয় পায় বিজেপি।