শ্রীপুরে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মর্যাদাহানি, লজ্জা, ক্ষোভ সর্বোপরি বিচারহীনতার কারণেই হযরত আলী ও তার মেয়ে আয়েশা আতহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে
টি.আই সানি,গাজীপুর Channel 4TV :
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক গাজীপুরের শ্রীপুরে আতহত্যায় বাধ্য হওয়া বাবা মায়ের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। সোমবার দুপুর ১টায় কর্ণপুর সিটপাড়া গ্রামে ওই পরিবারের একমাত্র নারী হালিমা বেগমের সাথে কথা বলেছেন।
মর্যাদাহানি, লজ্জা, ক্ষোভ সর্বোপরি বিচারহীনতার কারণেই হযরত আলী ও তার মেয়ে আয়েশা আতœহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবী করেন মানবাধিকার কমশিনের চেয়ারম্যান।
জিডির বিষয়টি স্পেসিফিক এলিগেশন ছিল:
তিনি বলেন, হালিমার অভিযোগ অনুযায়ী তার আট বছরের মেয়েকে যে নির্যাতন এবং মর্যাদাহানি করা হয়েছে, সে ব্যাপারে থানায় জিডি হয়েছিল। সেটি একটি স্পেসিফিক এলিগেশন ছিল। কি কি ধরণের অন্যায় তার প্রতি করা হয়েছে সেগুলো জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সে ব্যাপারে তারা (পুলিশ) তদন্ত করেছে এবং বাদীর সাথে কথা বলেছে। কিন্তু সে ব্যাপারে তারা (পুলিশ) কোনো লিখিত প্রতিবেদনও দেয়নি।
চেয়ারম্যান বলেণ, আমি যেটা মনে করি সেটা হচ্ছে এ অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে ট্রিট করে বিবাদীদের ধরার জন্য আরো অনেক বেশি সক্রিয় হওয়ার কথা ছিল। হালিমা বেগম বলেছে থানা এ বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয়নি। এটাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়ার দরকার ছিল। তার মেয়েকে মর্যাদাহানির জন্য দু:খ, ক্ষোভ, লজ্জা, গ্লানি থেকে মনে হয়েছে হয়ত হযরত আলী মনে করেছে তারা তাকে পাগল বানিয়ে ফেলবে। এ অবস্থায় আমার বেঁচে থাকার যুক্তি নেই। সমাজ, আইনের প্রতি তার বিশ^াসের অভাবের কারণেই তাকে আতœহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে।
মানবাধিকারের বিষয়টা হচ্ছে যে, আইন বলেছে রাষ্ট্র যাকে যে দায়িত্ব বা ক্ষমতা দিয়েছে তা যদি সে সঠিকভাবে ব্যবহার না করে তবে তার দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে ধরা নেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন যারা করেছেন তাদের সাথে পুলিশও এ দায়বদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।
আমাদের বিচার ব্যবস্থা, আমাদের সিস্টেম এগুলো মানুষকে পাগল বানিয়ে দেয়। বার বার বিচারহীনতার কারণে মানুষের মধ্যে এবনরমালিটি আসতে পারে। তাকে প্রকৃত পক্ষে পাগল হিসেবে ভাবা যাবেনা। হালিমাকে সত্যিকার অর্থে বদ্ধ পাগল এটা বলা যাবে না। মেডিকেল সায়েন্স ভাল বলতে পারবে।
হালিমা বেগমের স্বামী নিহত হযরত আলী:
হযরত আলী মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকতে চেয়েছে। বর বার সংগ্রাম করে ব্যার্থ হয়েছে। জনপ্রতিনিধি, সমাজ তার প্রত্যাশার প্রাপ্তিতে ব্যার্থ হয়েছে। তবে এরকম অবস্থাতে পড়লে যে কোনো মানুষের মধ্যে পাগলামি ভাব আসতে পারে।
তার সম্পত্তির ওপর একদল স্বার্থান্বেষী মানুষের লোভ পড়েছে। সম্পত্তি তার কাল হয়েছিল। গত চার মাসে হালিমা বেগমের মেয়ের প্রতি যে নির্যাতন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে, যার জন্য সে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে এবং থানায় অভিযোগ করেছে, তা থেকে সে কোনো বিচার পায়নি। এ কারণেই সে ও তার স্বামী হতাশ হয়েছে। আতœহত্যাটা হতাশার একটি অভিব্যাক্তি। যার কারণে আজকের আতœহত্যা করতে সে বাধ্য হয়েছে।
মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টিতে দায়ী যারা:
প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যারা এর জন্য দায়ী তা বলতে গেলে এক নাম্বারে বলতে হয় তাহলে প্রথমে বলতে হবে এক ধরণের স্বার্থান্বেষী লোকেরা দীর্ঘদিন যাবত তার দখলে থাকা সরকারী সম্পত্তি দখল করার জন্য তার ওপর অত্যাচার জুলুম করেছে তারা দায়ী, যারা তার মেয়েকে লাঞ্ছিত করেছে মর্যাদার সাথে তাকে বাঁচতে দেয়নি তারা দায়ী, এবং সেই সাথে আমাদের যাদের প্রটেকশন দেয়ার দায়িত্ব ছিল তারা (জনপ্রতিনিধি) তা করেনি। এমন মর্যাদাহানির কেইসে সালিশীর কোনো দায়িত্ব তাদের থাকে না, তারা দায়ী। পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে আবেদন পেয়েও কোনো অ্যাকশন নেয়নি এরকম একটা ঘটনায় তারাও তাদের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে না। এটি শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, তাদেরকে ফৌজদারী বিচারের আওতায় এনে আইনের কাঠগড়ায় তাদের সোপর্দ করতে হবে। আমরা অর্থাৎ, মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে লিগ্যাল এইড সাপোর্টের এক্সটেন্ড করেছি। নিহত পরিবারের বাদী হালমা বেগমের জন্য সকল আদালতে আমরা লড়ে যাব। তাকে কেন্দ্র করে অসহায়ের প্রতি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করব। এতে সফল হলে আমরা অনেক ক্ষেত্রে সফল হব।
জীবন দিয়ে বিচারের জন্য একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হল :
বিচারহীনতার জন্য তারা যে জীবন দিল এটা আমাদের জন্য জাতির জন্য একটা লজ্জাষ্কর বিষয়। আইনের শাসনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ এখনও আসেনি। আইনের শাসন থেকে আমরা এখনও অনেকটা দূরে আছি। যার কারণে একটা মানুুষকে কোনো জায়গায় বিচার না পেয়ে জীবন দিয়ে বিচারের জন্য একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হল, দেশের অসহায় মানুষ যেন বিচার পায়। আমাদেরকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, অসহায় মানুষদের বাাঁচিয়ে রাখতে হবে।
আমাদের দেশে যত মানবাধিকার লঙ্গনের ঘটনা হয়েছে, নাসিরনগরের হিন্দুদের ওপরে বলেন, সেখানে হচ্ছে যে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল জমি গ্রাস করার উদ্দেশ্য নিয়েই এসমস্ত অসহায় মানুষের ওপর নির্যাতন করে। একসময় তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হলে জমিটুকু তারা গ্রাস করে ফেলে।
এখানেই আইনের শাসন আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। আইনের শাসনের প্রতি আমাদের বিশ^াসহীনতার কারণেই হযরত আলীকে তার মেয়েকে নিয়ে আতœহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে। এখন হালিমাকে দেখে রাখার দায়িত্ব স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের। পুলিশকে তার সম্পত্তি, তার গরু, ঘর প্রটেকশন দিতে হবে। তাকে বয়ষ্কভাতা, বিধবা ভাতা সকল কিছু দিতে হবে।
পরিদর্শনের সময় তার সাথে ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক শরীফ উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুস সবুর প্রমূখ।
প্রসঙ্গত, ২৯ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনের পশু হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় কর্ণপুর গ্রামের হযরত আলী ও তার মেয়ে আয়েশা আক্তার ট্রেন লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আতœহত্যা করেন।