বাবা-মেয়ের আত্মহত্যা: হালিমার দায়িত্ব নিল জেলা আওয়ামী লীগ
মেয়ের ওপর চালানো অত্যাচারের বিচার না পেয়ে মেয়েসহ ট্রেনের তলায় আত্মাহুতি দেওয়া হযরত আলী সরকারের স্ত্রী হালিমা বেগমের আজীবন ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক মো. ইকবাল হোসেন সবুজ।
মঙ্গলবার ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল শ্রীপুরের গোসিঙ্গা ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামে হযরত আলীর বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তারা হালিমা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় তারা হালিমা বেগমকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। প্রকৃত দোষীদের কেউই রেহায় পাবে না।
এর আগে তারা নিহত হযরত আলী ও তার মেয়ে আয়েশা আক্তারের কবর জিয়ারত করেন।
মো. ইকবাল হোসেন সবুজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আওয়ামী লীগের একজন সদস্য হিসেবে আমি আজীবন হালিমা বেগমের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছি। আজকের পর থেকে তার সব দায়িত্ব আমার। সে অামার পরিবারের একজন হয়ে থাকবেন।
তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কেউই পার পাবে না। আমরা তার বিচার নিশ্চিত করবো।
গত শনিবার সকালে শ্রীপুর রেলস্টেশন থেকে কিছুটা দূরে রেললাইন থেকে বাবা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পরিবারের অভিযোগ, ফারুক নামের স্থানীয় এক বখাটে হযরত আলীর মেয়ে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী শিশু আয়েশাকে একাধিকবার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের কাছে ঘটনার বিচার চাইতে গিয়ে পাননি। তিনি তা ধামাচাপা দেন। পরে থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি।
এই ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সারাদেশের মানুষকে স্তব্ধ করে দেয়। এরই মধ্যে ইউপি সদস্য আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, বিচারহীনতার কারণেই হযরত আলী তার মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন।
হযরত আলী দিনমজুরের কাজের পাশাপাশি গরু লালন-পালন করতেন। আর তার স্ত্রী হালিমা বেগম বাসা বাড়িতে কাজ করত। নিঃসন্তান এ দম্পতি আয়েশার মাত্র একদিন বয়সেই দত্তক নিয়ে এসেছিলেন। তাদের আদর-যত্নে কেউ কখনো ভাবতে পারতো না আয়েশা তাদের পালিত সন্তান তাকে নিজেদের সন্তানের মতো লালন-পালন করছিলেন তারা।
প্রায় ৩০ বছর আগে দিনমজুর হযরত আলী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কর্ণপুর ছিটপাড়া গ্রামের হালিমাকে বিয়ে করে। অভাব অনটনের সংসারের যোগান দিতে হালিমা ভিক্ষাবৃত্তি ও অন্যের বাড়ীতে ঝিঁয়ের কাজ করে।
চ্যানেল আই অনলাইনকে আয়েশার মা হালিমা বলেন, আমার মেয়ে লেখাপড়ায় ভালো ছিল, বাসার ঘরে এখনো ওর বই আছে। কিন্তু ওই ফারুক আমার মেয়েকে নির্যাতন করেছে। এর কোনো বিচার পাইনি। আমার গরু চুরি করেছে তারও কোনো বিচার পাইনি।
‘শনিবার সকালে বাপ মেয়ে নাস্তা করে এক সঙ্গে ঘর থেকে বের হয়, তারপরেই ট্রেন লাইনে কাটা পড়ার ঘটনা শুনি’ এই বলেই মুর্ছা যায় হালিমা।
আয়েশার পরিবারের অভিযোগ, ফারুক কয়েকবার তাকে জঙ্গলে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে। এজন্য হযরত আলী ফারুকের বাবার কাছে অভিযোগ করে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের কাছে গিয়েছে সেও প্রতিকার করেনি। বরং একথা শুনে ফারুক হযরত আলীর গরু নিয়ে জবাই করে সবাই মিলে ভাগ করে খায়। শেষ পর্যন্ত গত ৪ এপ্রিল শ্রীপুর থানায় অভিযোগ করেন। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।