মেহেরপুরে লিচুর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাঁসি
আল-আমীন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার Channel 4TV : মধু মাসে গাছে গাছে লিচুর সমারোহ ও পাকা লিচুর সুগন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছে মেহেরপুর ও মুজিবনগর লিচুর বাগানগুলো। মৌমাছিরাও লিচুর ঘ্রাণ নিতে বাগানে ভোঁ ভোঁ শব্দ করে এ ডাল থেকে ও ডালে উড়ে বেড়াচ্ছে। বাগান মালিক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের সুস্বাদু লিচু মধু বৈশাখ এর ১৫ থেকে শুরু হলেও জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথমেই বাজারে উঠবে বিভিন্ন জাতের লিচু। বর্তমানে দেশি প্রজাতির মাদ্রাজি লিচু বাজারে উঠছে। দেশি প্রজাতির বোম্বে ও অন্যান্য লিচু বাজারে উঠার অপেক্ষায় রয়েছে। এবার আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকুলে থাকায় মেহেরপুর ,মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলার লিচুর এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।
বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর অতি মাত্রায় তাবদাহ এবং জলবায়ুর প্রভাবে ও প্রচুর খরার কারণে বহু বাগানে লিচুর গুটি ঝরে যাওয়ার পরও বাম্পার ফলন হয়েছে। এ আশায় বাগান মালিক ও বাগান ক্রেতা ব্যবসায়ীরা প্রচুর পরিচর্যায় করেছে। লিচুর ফুল ও মুকুল আসার শুরু থেকেই তাদের গাছের গোড়ায়, ডাল ও আগায় পানি দিতে হয়েছে। গাছের খাবার হিসেবে জৈব ও রাসায়নিক সার এবং ফলগাছের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ স্প্রে নিয়মিত করতে হয়েছে।
মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী,৩টি উপজেলাতেই কম বেশি লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগান এখন ছেয়ে গেছে মাদ্রাজি, চায়না, বোম্বাই, কাঁঠালি আর দেশি জাতের লিচুতে। বিগত বছরগুলোয় বাগান মালিকরা লিচু চাষে ব্যাপক লাভবান হওয়ায় এবারও অনেকে নতুন বাগান সৃজন করেছেন।
তবে কালবৈশাখী ঝড়ে বাগান গুলোতে লিচুর প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা ক্ষতির আশংকা করছে । মাঝখানে তীব্রখরায় চায়না থ্রি,চায়না ফোর ও বোম্বে জাতের লিচু গাছে ফেটে গেছে। ফেটে যাওয়ার রোধ করতে লিচু গাছে নিয়মিত পানি স্প্রে করে ছিল চাষিরা। ১৬ই বৈশাখ থেকে আঠি লিচু বাজারজাতকরণ করতে শুরু করেছে। জৈষ্ঠ মাসে প্রথম দিকে পর্যায়ক্রমে সব ধরনের লিচু বাজারে উঠবে। সবশেষে চায়না ও দেশি জাতের কাঁঠালি লিচু বাজারে আসবে। দেশী কাঁঠালি লিচু ও আঠি লিচু বর্তমানে বাজারে ১৮০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হয় চায়না থ্রি ও চায়না ফোর জাতের লিচু।
মেহেরপুর সদর উপজেলার তাতিপাড়া, সুবিদপুর গ্রামের লিচুর বাগানের মালিক মালাই খাও শাহিদ মল্লিক জানান, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া মোটামুটি লিচুগাছের অনুকুলে রয়েছে। ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা আগাম বাগান কিনে রেখেছেন।
সদর উপজেলার মুজিবনগর গ্রামের বাগান মালিক মঙ্গল মিয়া জানান, গতবারের তুলনায় এবারে লিচু তার বাগানে অনেকটাই বেশী হয়েছে । বৃষ্টি ঝড় বেশী হওয়ায় ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । নিরাপত্তা বিষয়ে বর্তমানে সমস্যা নেই, তবে মাঝেমধ্যে দুর্বৃত্তরা লিচুর বাগান লুট করে নেয়। তবে এবার আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
লিচু বাগানের পরিচর্যাকারী মুজিবনগর গ্রামের হামিদুল ইসলাম জানান, তারা লিচুগাছের পরিচর্যা করে প্রতিদিন ২৫০ টাকার মতো মজুরি পান বাগানের মালিকদের কাছ থেকে। তবে এবার লিচুর ফলন গতবারের তুলনায় এখন পর্যন্ত ভালো বলে জানান তারা।
এদিকে মেহেরপুরে লিচু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছরই ব্যাপকহারে লিচু নষ্ট হয়। এ ব্যাপারে মেহেরপুরে লিচু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রাজা জানান, মেহেরপুরে লিচু, আম এবং শাকসবজি সংরক্ষণের জন্য কোন বিশেষায়িত হিমাগার নেই। চেম্বার থেকে উদ্যোক্তাদের বিশেষায়িত হিমাগার তৈরির জন্য আমরা অনুপ্রাণিত করে আসছি।
একই উপজেলার আজান গ্রামের লিচু বাগান মালিক রওশন, কাউছার হাজী জানান, তার বাগানের ৫০টি গাছের সবই আটি স্থানীয় মোজাফ্ফর জাতের লিচু। গত কয়েক বছরে এমন পরিপূর্ণ লিচু তিনি দেখতে পাননি বলে জানান। এবার অনুকূল পরিবেশের কারণে লিচুর বাম্পার ফলন হবে। তাই ১৪ হাজার টন লিচু উৎপাদনের আশা করা যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। এবার মেহেরপুর জেলায় একশ’ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হবে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় ২ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান আছে (নতুনভাবে গত দুই বছরে তৈরি বাগান এই হিসেবের বাইরে)। গত বছর ১৩ হাজার টন লিচু উৎপাদন হয়।এবারও বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে।ফলন ভাল হওয়ায় দিন দিন লিচু চাষ বাড়ছে। জেলায় এবার ১৮ হাজার টন লিচু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে ।